আকাশপথে কাছে এলো হায়দারাবাদ

, শিল্প-সাহিত্য

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 20:04:03

ভারতের কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই,  মুম্বাইয়ের মতো আঞ্চলিক প্রধান শহরগুলো ঢাকা থেকে সরাসরি বা অনায়াসে যুক্ত রয়েছে আকাশপথে। সে তালিকায় দাক্ষিণাত্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর 'সিটি অব পার্ল' বা 'নিজামের শহর' নামে প্রসিদ্ধ হায়দারাবাদও চলে এসেছে ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ায়।

হায়দারাবাদ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী ও সবচেয়ে বৃহত্তম শহর। দক্ষিণ ভারতের উত্তর অংশে দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে, মুসি নদীর তীরে ৬৫০ বর্গ কিলো মিটার এলাকা নিয়ে অবস্থিত, যার বেশিরভাগ অংশ গড়ে ৫৪২ মিটার (১,৭৭৮ ফুট) সমুদ্ররতল থেকে উচ্চে এবং কৃত্রিম হ্রদের চারপাশে পার্বত্য অঞ্চল অবস্থিত। জনসংখ্যা ৬৯ লক্ষ ।

একসময়ে অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী ছিল হায়দারাবাদ শহর। কিন্তু পুরনো অন্ধ্র ভেঙ্গে এখন তৈরি হয়েছে নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানা। আর রাজধানী হায়দারাবাদ পড়েছে তেলেঙ্গানার ভাগ্যে। অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন, ২০১৪ অনুযায়ী এই শহরটি ২০২৪ সাল পর্যন্ত তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ, উভয় রাজ্যের রাজধানী রূপে গণ্য হবে।

হায়দারাবাদের অর্থ "হায়দারের শহর" বা "সিংহের শহর"। অর্থাৎ, হায়দার (অর্থ সিংহ) এবং আবাদ (অর্থ শহর)। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা.)-এর শক্তিমত্তাকে সম্মান জানাতে তাঁকে 'হায়দার' নামকরণ করা হয়েছিল, যিনি যুদ্ধে সিংহের মতো বীরত্বের কারণে হায়দার নামে পরিচিত হন ছিলেন। তাঁরই নামে শহরটির নামকরণ করেন প্রতিষ্ঠাতা কুতুব শাহি রাজবংশ (১৫৯১-১৭২৪)-এর সুলতানগণ। পরবর্তীতে হায়দারাবাদ শাসন করেন নিজাম উপাধি ধারী শাসকগণ (১৭২৪-১৯৪৮)।

ইসলামী স্থাপত্যের পণ্ডিত অ্যান্ড্রু পিটারসনের মতে, শহরটিকে আদিতে 'আসলেবাগনগর' বা 'উদ্যানের শহর' বলা হত। একটি জনপ্রিয় ঐতিহাসিক তত্ত্ব থেকে জানা যায় যে, নগরটির প্রতিষ্ঠাতা গোলকোন্ডা সালতানাতের মুহাম্মদ কুলী কুতুব শাহ স্থানীয় নাচনেওয়ালী ভাগমতীর প্রেমে পড়েছিলেন, যিনি পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং 'হায়দার মহল' উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।

হায়দারাবাদ শহরের রাজনীতি এখনো নিজাম-শাসন প্রভাবিত। শহরের একটি মাত্র লোকসভা আসন রয়েছে যা ১৯৮৪ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে 'সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন' বা 'মীম' নামক রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় রয়েছে, যার নেতা ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।

হায়দারাবাদ ঐতিহাসিক নির্মাণ স্থাপনার জন্য বিশ্ববিখ্যাত। যার মধ্যে রয়েছে চারমিনার , চৌমহল্লা প্রাসাদ, মক্কা মসজিদ ও নিজামের অলংকার প্রাসাদ, গোলকোন্ডা দুর্গ, হোসেন সাগর হ্রদ ইত্যাদি।

হায়দারাবাদ ভারতের সবচেয়ে উৎপাদনশীলতায় পঞ্চম বা ষষ্ঠ- মেট্রো অঞ্চল হিসাবে স্থান করে নিয়েছে। আইটি সেক্টর, উচ্চশিক্ষা,  চিকিৎসা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতির স্বাক্ষর রেখেছে হায়দারাবাদ। পুরনো হায়দারাবাদ ও সেক্রেন্দ্রাবাদ মিলিয়ে হায়দারাবাদ মেট্রোপলিটন। পুরনো শহর মুসলিম প্রধান এবং ভাষা উর্দু। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিয়া মুসলিম বাস করেন যে শহরে, তার একটি হায়দারাবাদ আর অন্যটি লখনউ।

হায়দারাবাদি রান্নায় রয়েছে চাল, গম এবং মাংসের খাবারের বিস্তৃত ভাণ্ডার এবং বিভিন্ন মশালার দক্ষ ব্যবহার। এই শহরের বিশেষ শৈলীর বিরিয়ানি পৃথিবী বিখ্যাত। হায়দারাবাদী রান্না কিছুটা ফরাসি বা ইরানি রন্ধনশিল্প দ্বারা প্রভাবিত হয় শহরের শাসক নিজামদের হাত ধরে এই বিরিয়ানির চল শুরু হয়।

ক্রিকেট হায়দারাবাদের জনপ্রিয় খেলা। উপমহাদেশের প্রাচীনতম ক্রিকেট ক্লাব 'ডেকান ব্লুজ'-এর প্রতিষ্ঠাস্থল এই শহর। হায়দারাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ভারতের অন্যতম বৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামও ভারতের অন্যতম ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম। শহরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত গান্টি মোহনা চন্দ্র বাল্যযোগী স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স রয়েছে, যেখানে একটি অ্যাথলেটিক স্টেডিয়াম (ফুটবল এর জন্যে ), একটি ইনডোর স্টেডিয়াম (ব্যাডমিন্টন সহ ঘরোয়া খেলার জন্যে) এবং ক্রীড়া কমপ্লেক্স (হকি খেলার জন্যে) রয়েছে। হায়দারাবাদের 'রামেজি ফিল্ম সিটি' বিশ্বের সর্ববৃহৎ চলচ্চিত্র স্টুডিও রূপে স্বীকৃত।

হায়দারাবাদের অবস্থান ভারতের রাজধানী দিল্লির ১,৫৬৬ কিলোমিটার (৯৭৩ মাইল) দিল্লির দক্ষিণে, মুম্বাই এর ৬৯৯ কিলোমিটার (৪৩৪ মাইল) দক্ষিণপূর্বে এবং দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের তেলঙ্গানার দক্ষিণে অবস্থিত। শহরের জলবায়ু উষ্ণমন্ডলীয় আর্দ্র এবং শুষ্ক। পাশাপাশি কিছু অংশে উষ্ণ আধা-শুষ্ক জলবায়ু বিরাজমান।

হায়দারাবাদ তথা তেলেঙ্গানা ভারতের সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলো অন্যতম। সরাসরি আকাশপথে যুক্ত হওয়ায় যা এখন ঢাকার অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে।

আরও পড়ুন: ঢাকা থেকে হায়দরাবাদে ফ্লাইট চালু ইন্ডিগোর

এ সম্পর্কিত আরও খবর