পরিতোষ হালদারের একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

পরিতোষ হালদার | 2023-09-01 09:55:14

অশোকপত্র

স্পর্শ ছাড়া কোনো শব্দ আসে না আর...আয়ু খোলো, হে ঈপ্সিত হরিণ।
প্রতিবেশির চোখে মৌনিরেখা, নীল হয়ে আসে রাত ও অপেক্ষাবেলা।

অতসী গন্ধে কতবার ডুবে গেছে চাঁদ। দূরে জন্মের নামতাগান—
অসংখ্য কন্যাপ্রবাহ...
পুত্র প্রবাহধারা।

প্রতিদিন ভ্রান্তি নামে, ঘুমের ভেতর দোল খায় রাত
অশোকপত্র...
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে তাকিয়ে দেখি—ঘরের মতো বদলে গেছে ঘর।

আমিও যেতে যেতে রোজ সন্ধ্যা বদল করি।
আমার হংস জুড়ে জল, ক্রিয়াময় জোড়া অন্ধকার।

ছায়ানাট

চার্বাক খোলো, জলপর্বে এসে ভাসুক অপ্সরা।
কেউ তো তুমি, চিৎকার শেষে যে বাজাতে পারে পাতার বাঁশি।

সোমবারের মতো হে হিব্রু ময়ূর, তোমার পেখম ছুঁয়ে নেচে উঠুক অক্ষরমালা।

আমারও মুদ্রাদোষ আছে, অকস্মাৎ বেজে উঠি সংসারের মতো...
একদল ব্রহ্মনারী কী নিশ্চুপ শুয়ে আছে ঘাসে; তারা ডাক দিলে চাঁদের কপাট খুলে
নেমে আসে চাঁদ।

তুমি তার কসমিক মায়া, একবার পিপাসা বিলাও।

দ্বিবীজপাতা

অথচ মৌন ঝরে পড়ে। পাতার আড়ালে যে বসন্ত ছিল
তার পালিশ লেগে থাকে বুকে।
উঁচু উঁচু আলতো বিকেল, আরো নিচে জলরঙ।
যেখানে স্নান নিলে সমুদ্রও পথ পেয়ে যায়।
আমরা ছবিওয়ালা, পরস্পরের প্রচ্ছদ হতে চাই।
অকস্মাৎ পাহাড় থেকে পড়ে যায় বর্ষাকাল, শিরোনামহীন কিছু নূপুর জীবন।
বাষ্পের মতো আসি, গন্ধ পেরিয়ে দেখি, পড়ে আছে বাগানবিলাস।

এবার উষ্ণ করো, ঈষৎ ঝুঁকে এসে দেখো—আমি এক শান্ত দ্বিবীজপাতা।
জোড় খুলে দাও, প্রার্থনা থেকে মুক্ত করো ছায়া।

আমি অক্ষর হয়ে যাই, যার গায়ে অনিবার্য রোদ লেগে থাকে।

দাঁড়িকমা

পতন পর্যন্ত প্রতিটি দাঁড়িকমাই প্রশ্নবোধক।

কোনো কোনো বিজ্ঞান তাই চাপকলের মতো একা। সুযোগ পেলে ভাসিয়ে দেয় বসন্ত।
একবার রাত, শব্দের স্বপক্ষে ফেটে যায়।

সেই থেকে তুমি একা-সকল স্পন্দন তোমার অপেক্ষা করে।
তুমি ঘুম ও মৃত্যুর মতো আবির্ভূত হও।

আর আমাদের অবগাহন করার প্রতিঈর্ষা দান করো।
তবুও একদল মেষপালক কীসব আনন্দ নিয়ে ফুল চাষ করে,
জন্মদিন সাজায়।

তারা জানে—মাংসের বাজার পড়ে গেলে দামি হয়ে ওঠে দোকানের রজনীগন্ধা।

অস্মিতি

আর্শিজগৎ থেকে হেঁটে আসা আমি, আমারও নির্মাণ আছে—
দুই পায়ে তাণ্ডব প্রণালি। দূরে যাব, তবুও অশোকস্তম্ভের তলে
রেখে যাব দীঘ-নিঃশ্বাস।

আমাকে রাত্রি দাও...
হারিয়ে যাওয়ার মতো অস্মিতি দাও।

সেই কবে, একজন কিম্পুরুষের কাছে রেখে এসেছি সাতটি আঙরাখা।
মৃত্যুর আগে যে ঊনপঞ্চাশবার একেঁছিল তাঁতঘরের ছবি।

আমি সেই পোট্রেট চুরি করে টাঙিয়ে রেখেছি ব্যক্তিগত সরাইখানায়।
যেখানে সময় দেখতে দেখতে প্রতিদিন হয়ে উঠি—
বিষণ্ণ রাক্ষস।

এ সম্পর্কিত আরও খবর