বালকটি ছিল কাগজের ভাঁজ-কারুকাজ প্রকৌশলী। নিরানব্বই পদের কাগজের নৌকা নিরানব্বই পদের কাগজের উড়োজাহাজ বানাতে শিখেছিল। বালিকাটির ভালোবাসা পেতে একদিন নিরানব্বই পদের কাগজের নৌকা নিরানব্বই পদের কাগজের উড়োজাহাজ বালিকাটির সামনে পেশ করল। বালিকাটি ছাতামাথা কিছুই হয়নি বলে সব ভাঁজ খুলেটুলে একাকার করল। কাগজগুলো দলা করে হাতব্যাগে পুরতে পুরতে বলল অ্যাতো দামী কাগজগুলো কেউ এভাবে নষ্ট করে? ইস, ছোলাবুট্ বাদাম খাবার ঠোঙ্গা ছাড়া আর কিছুই হবেনা কাগজগুলো দিয়ে। রেগেমেগে সেই যে গেল বালিকাটি আর কখনো ফিরলো না। এক যুগ পর্যন্ত বালকটি আর কখনো কোনোদিন একটি কাগজের নৌকাও বানাতে পারল না। ভাঁজ ভুলে গিয়েছিল।
এক যুগ পর বালকটি খবরের কাগজের পাতায় দেখল দুনিয়ার অসংখ্য শহরে নিরানব্বই পদ কাগজের নৌকা নিরানব্বই পদ কাগজের উড়োজাহাজ প্রদর্শনী করে দুনিয়াসেরা শ্রেষ্ঠ অরিগ্যামিস্ট পদক পেয়েছে এক যুবতি। সে আর কেউই নয় তার এক সময়ের ভালোবাসার বালিকা। বিশ্ববিজয়িনীর জন্য দেশে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা উৎসবের আয়োজন চলছে। কিন্তু বিশ্ববিজয়িনী জাপানের এক শিল্প যাদুঘরে অরিগ্যামি স্পেশ্যালিস্টের পদমর্যাদা পেয়েছে। সে’দেশে আজীবন বসবসাসের যোগ্যতা উপহার পেয়েছে। খবরের কাগজকে বলেছে— যে পোড়ার দেশে শিল্পকলার কদর নাই সে’দেশে আর কোনোদিন ফিরবে না।
আনন্দে যুবকটির মন আকাশের দখল নিল। সাত সমুদ্র তেরো নদী মহাকাশ ঝলসে-ছলকে উঠল যুবকের হৃদয়োৎসবের আতশবাজিতে। সে’দিন হতে বালিকাটির প্রতি অসীম ভালবাসায় বালকটি প্রতিদিন নিরানব্বই পদের অরিগ্যামি নৌকা সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে বলত— যা যা যা জাপান যা, ভালবাসা! প্রতিদিন নিরানব্বই পদের কাগজের উড়োজাহাজ আকাশে উড়িয়ে দিয়ে বলত— যা যা যা জাপান যা, ভালবাসা!
যুবকটির সংসার-সন্তান হলো, একসময় বৃদ্ধও হল। যেদিন সে মরণশয্যায় সে’দিনই কিশোরী নাতনিটি জানতে চাইল— আজও তুমি নিরানব্বইটি কাগজের নৌকা ভাসাতে নিরানব্বইটি কাগজের উড়োজাহাজ উড়াতে ভুলোনি— যাকে ঘৃণা করার কথা, অ্যাতো ভালবাসো ক্যানো তাকে?
কারণ সে আমার একশ’ আটানব্বইটি কাগজের ভাঁজ নষ্ট করেনি, ধ্বংস করেনি, টিকিয়ে রেখেছিল, পুনর্জীবন দিয়েছিল, ভাঁজগুলোর অর্থ দিতে পেরেছিল, স্বীকৃতি মিলিয়েছিল, ভুলে যাওয়া সব ভাঁজ আবারো মনে করিয়ে দিয়েছিল।
[ওয়াশিংটন আরভিং-এর স্কেচ গল্প-ধরণ, এবং সুদর্শন ফকির-এর লেখা ও জগজিৎ সিং এর গাওয়া ‘কাগজ কি কাশতি’ দ্বারা অনুপ্রাণিত এই ক্ষুদে গল্পটি।]