কী আছে এপ্রিলের ভেতর

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

ঊষসী কাজলী | 2023-08-28 04:03:02

বেকার

আমরা বেকার, আমাদের হাতে সময় অফুরন্ত
খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে উঠেও মেলা সময় পড়ে থাকে
আমরা আঁতিপাতি কাগজ পড়ি,
ছেঁড়া চটি নিয়ে সাবধানে হাঁটি,
ঠা ঠা রোদেও ছাতা নিতে আমাদের কেমন লজ্জা করে।
আমরা ধীরগতি, সময় আরো ধীর—
সকালে কেউ ডাকে না আমাদের,
বিকেলে কখনো কখনো হাওয়া খেতে যাই;
বড় বড় ঘাসের জঙ্গল পেরোতে পেরোতে
ঘাস চিবুই, রস বের করি
নইলে আমরা কোথাও যাই না
সিলিংফ্যান দেখে দেখে এক একটা গোটাদিন কাটিয়ে দিই।

 কী আছে এপ্রিলের ভেতর

এসো,
দেখি কী আছে এই এপ্রিলের ভেতর!
মার্চের দিনগুলি আমাদের কেটেছিল দোটানায়
স্পষ্ট করে বললে, আমরা লড়াই চেয়েছিলাম
       অনুকূল ছিল আবহাওয়া
শুধু প্রস্তুতি সারা গেল না বলে
দিনগুলিকে অমন অবলীলায় যেতে দিলাম
সূর্য এখন উল্লম্ব, তেজে ঢালে রৌদ্র
ক্লান্ত, নির্বীর্য কাটা ফসলের মাঠ
ঠা ঠা দুপুরের কাছে হাঁটু মুড়ে কারা
ছায়া চায়, বুনো হাঁস ওড়ে ইতিউতি
আমরা বিমূঢ়, আকাশের দিকে চাই
থেকে থেকে বাজকুড়ুলের ডাকে চমক ভাঙে
এপ্রিলের ভেতরে আমাদের যাত্রা
কোন পথ নেবে—
দেখি, একটি দুটি কৃষ্ণচূড়ার রক্তফুল ফোটে
এই এপ্রিলের ভেতর
               আর ঝ’রে যায়।

জঙ্গলের রাস্তা

মসৃণ পথ ছেড়ে আমরা
এখন আনকোরা জঙ্গলের রাস্তায় ঢুকে পড়েছি
আমাদের রসদ সম্পর্কে
আছে আশ্চর্য রকমের আস্থা ও দম্ভ।
মাথার ওপর আকাশের জায়গায়
সবজে কালো জাফরি চাঁদোয়া,
ঘন নীল বনের ভিতর শ্বাপদ ফাঁদ
সাগ্রহে জড়াচ্ছি আঙুলে—
ছুঁড়ে দিচ্ছি অচেনা বিষলতা, ইতস্তত
পা পড়ে যাচ্ছে ছোট বড় গর্তে
রোমাঞ্চে আমাদের তিরতিরে বুক
ফুলে ফেঁপে উঠছে
জঙ্গলের রাস্তা ক্রমশ জটিল ও সঙ্গিন
আমরা মসৃণ পথ ছেড়ে এসেছি বহুক্ষণ।

 বান্ধবগড়ের ‍দুপুর

সেই দুপুর আমি পেয়েছি
মনে মনে অনেকেই চেয়েছে যে নিরালম্ব গ্রীষ্মদুপুর
আর আমার কল্পনা করে নিতে বাধা নেই
আমি এখন বান্ধবগড়ের কুঁয়ো দেখব।
কত লোক কুঁয়োর মধ্যেই রেখে দিলো হাতঘড়ি ও মধ্যবয়স,
তেজীয়ান ঘোড়ার স্বপ্নে কেউ রচনা করলো ময়দান—
আমি এখন বড় বড় পাথরের চাঁই সরিয়ে
                 চলে এসেছি কুঁয়োর কাছে
বাবলা আর শিরীষের এই জঙ্গল কেমন নিঝুম
এমন ছায়া আগে দেখিনি
তামাক পাতার ঘ্রাণে ছুটে যাইনি কোথাও

কত কোটি বছরের ঠান্ডা জল জমে আছে
                               কুঁয়োর ভেতর?
এই দুপুরে, আমি বান্ধবগড়ের কুঁয়োর ধারে
বিকেল অব্দি জিরিয়ে নেব।

জরিপ

কূট নিয়মে ভাগ করা পৃথিবীর জমি—
নতুন করে মাপ হবে, ফিতে পাতা দক্ষিণ চীন সাগরে।
বিরাট আকাশে ভাসে মেঘ, কিউমুলোনিম্বাস
মাটির নিচে গুমরে ওঠে কারা?
নিজস্ব ত্যারছা আকাশ নিয়ে শহর দাপাচ্ছে ওলাক্যাব
ট্রামভর্তি লোক চলে গেল ধীর গতি,
মহিলারা সশব্দে নেমে পড়ল পাতালে,
হৈ চৈ করতে করতে ছেলে মেয়েরা যায় পাহাড়ের দিকে—

কিছুটা চা পান বাকিটা উতোরে সন্ধ্যা কাটে
‘নতুন নিয়মে ভাগ হবে পৃথিবীর জমি’
আর সকলেই ধরে নিয়েছে,
মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়বে না,
                             কোনোদিনই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর