কারণ বাঁচাবাঁচি নিয়ে চারদিকে প্রচুর মিথ

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

নাদিয়া জান্নাত | 2023-08-28 17:12:05

এই দেশে বৃষ্টি হয়

‘এই দেশে বৃষ্টি হয়’ সংক্রান্ত কবিতায় রাইসু যে ঘাস লিখেছেন সেই ঘাস আমরা জাবর কাটলাম, রংপুরে বসে। ঘাস চিবাতে চিবাতে মনের ভেতর তাথৈ তাথৈ নাচন শুরু হলো।
কবিতা পাঠের সময় নাচানাচি অপ্রাসঙ্গিক। তবুও আমাদের মন নাচছে।

নাচানাচিকে ইগনোর করা কঠিন।

তাই, কঠিন কাজকে চুলোয় না দিয়ে সহজভাবে আমরা গাইছি বৃষ্টির গান। এই বৃষ্টি ধর্মনারায়ণের প্রেমিকা বৃষ্টি দাশ নন। এই বৃষ্টি এলে “আমাদের ভেতর কোনো আড়াল থাকে না।”
এসব বৃষ্টিতে আমাদের দুর্দশা হয়, হরিত্ব সাধনের সাধ জাগে।

এত এত সাধ আমাদের। আমরা নিম্নবিত্ত মানুষ।

তবু, (জীবনানন্দ কিংবা রাইসুর তবু নয়) বৃষ্টি হয় এইদেশে ভাবলে ঘটে যাওয়া সমস্ত বৃষ্টি আমাদের ভাবনায় ফেলে—

প্রমোশন

প্রেমের ক্ষেত্রে একটা প্রমোশন জরুরি।
যেহেতু আমি নারী সেহেতু নিয়ম মতো প্রতিরাতে
আমাকে বুক পেতে দিতে হয়।
আমার স্তনের পথ ধরে হেঁটে যায় প্রেমিক।
প্রেমিক হলেই পুরুষের চরিত্র বদলে যায়।
একঘেয়েমি বিপ্লব দরকার পড়ে তার।

কেউ বিপ্লবী হতে চাইলে আমি তাকে বাধা দিতে পারি না, সেটা আমার স্বভাবে আসে না।
আমি চুপচাপ থাকি, রাজপথের মতো।

আমার বুকের ওপর হাঁটে আমার প্রেমিক, দৌড়ায়, মিছিল করে, স্লোগান দেয়, মিটিং ডাকে, আধখাওয়া জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলে আমার বুকের মাটিতে।

আমার ত্বকে আগুন ধরে যায়, আমি কুঁকড়িয়ে উঠি,
ঝলসে যায় আমার মাংস, আর্তনাদে ছুড়ে দিই হাত পা।
ঘেয়ো কুকুরের মতো লাল হয় আমার ভূ-ভাগ।
পোড়া মাংসের গন্ধে লালা ঝরায় পুরুষ।
আমি থু থু ছিটাই।
আমার প্রেমিক চেটে চেটে খায় আমার থুথু।
আমি আরো থুথু দিই।

লাথি দিয়ে বদলে ফেলি ভঙ্গি।
আমার কষ্ট হয়। আমি আড়ষ্ট হই।
ঘেন্নায় আমার চোখ বুজে আসে।
আমি বিড়বিড় করে বলতে থাকি—
প্রেমের ক্ষেত্রে নারীর প্রমোশন জরুরি,
এবং সেটা আজ এখনই।

হতভম্ব আর্টিস্টম্যান আঁকতে জানেন না

ক.
আর্টিস্টম্যান আজান আঁকলেন।
আজান শেষ হতে না হতেই ক্যানভাস জুড়ে নামাজে দাঁড়ালেন অনেকগুলো শাদা রঙের মানুষ।

ছবি আঁকার মাঝে যদি আর কোনো রঙ না থাকে কিংবা সব রঙ যদি শেষ হয়ে যায় তবে শাদা রঙ মানুষগুলো কি নামাজে দাঁড়িয়েই থাকবে?

মানুষ দেখা নিয়ে আমার মুগ্ধতা আছে। মুগ্ধতা নিয়ে আমি আজান দেখছি। আমি দেখছি সারি সারি শাদা মানুষ নামাজে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি ভাবছি, ভালো খরিদ্দার পেলে আর্টিস্টম্যান হয়তো মানুষগুলোকে বিক্রি করে দেবে…

খ.

দূর্গা আঁকার পর আর্টিস্টম্যান যদি একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকেন প্রতিমার দিকে তবে বিসর্জনের গল্পে নতুন করে লেখা হবে শুভঙ্করের ফাঁকি।

শ তে শব

শ তে শব

সময় সমান্তরাল এবং বিষাক্ত, আমাদের জানালার পাশে বৃষ্টি নেই—বৃষ্টি নেই চিৎকার। এই সব আলুথালু চিৎকার ও শীৎকারে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। স্মৃতির শাটার খুলে আমরা তিরস্কারের ফুল দেখি।

ক্রোধ এবং তর্ক নিয়ে বাঁচা যায় না।
ঘন ঘন মৃত্যু চাইলেও বাঁচা মরার সময়ে আমরা নার্সিং হোমে যেতে চাই। আমাদের খোঁজ নেন দায়িত্বরত ব্রাদার ও নার্স। তাদের মুখ যথেষ্ট মলিন। যেন, আমরা মরে গেলে তাদের মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হবে।
এই সমস্ত মলিনতা দূর করতে আমরা বাঁচতে চাই নিয়মিত।

বেঁচে আছি অথচ চারপাশ আস্থাহীন।
হল্লা আর উপহাসে চারপাশ ঝাপসা হয়ে যায়।
ঝাপসা হওয়া চারপাশ, ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস এসব মূলত ক্ষত। হৃদয়ের ক্ষত ঔষধ কিংবা মলমে সারে না।
হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে আমরা কার কাছে যাব?

আমরা জানি আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই।
পানশালা ও প্রেমের জন্য অর্থের প্রয়োজন।
আমাদের চারপাশ অর্থহীন।
অর্থহীন এবং অর্থহীন জীবন নিয়ে রোজগার করতে ভালো লাগে না আমাদের।
ভালো না লাগলেও আমরা বাঁচতে চাই,
কারণ—বাঁচাবাঁচি নিয়ে চারদিকে প্রচুর মিথ।
এইসব, মোটিভেশনাল মিথ আমাদের ভালো লাগে।

বাঁচতে হবে, এটা একটা প্ররোচনা।
এই প্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে আমরা আয়নার দিকে তাকাই। আয়না নিয়েও প্রচলিত অনেক মিথ আছে। আয়নার ভেতর আবেদন আছে।
আয়নার ভেতর নার্সিসিজম আছে।
আবেদন, মিথ এবং নার্সিসিজম আমাদের ভালো লাগে।
ভালোলাগা, মন্দলাগা এগুলো সমান্তরাল।
মস্তিষ্ক কমপ্রোমাইজ শিখে গেলে হৃদয়ের পাশে বিভাজন দেখা যায়। বিভাজনের পাশে একটা বক ফুল ফুটে উঠে ধীরে ধীরে...

হুইসেল

নারীর বুকে কমলা লেবু বসিয়ে
ঈশ্বর তাক করে আছেন রাইফেল।
চোখ বন্ধ করার সময় এখন নেই।
কারণ আমি নারী।
আমার সামনে মাননীয় ঈশ্বরের হাত।
আমার ডানে-বাঁয়ে আমার পুরুষ সহযোদ্ধা,
যারা কমলা লেবু খেতে ভালোবাসেন।

আমাকে ডানে বাঁয়ে সমুদ্রস্নানের ইঙ্গিত কুপ্রস্তাব।
আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন ধর্মপ্রাণ ঈশ্বর।
আমার পায়ের পাতায় অর্থহীন আওয়াজ।
আমি শুনতে পাই কোনো অদৃশ্য ডাক—বেশ্যা নাকি?
লাথি মেরে ফেলে দে সভ্যতার চাদর।
এ সময় নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখা মুশকিল।
যে কোনো সময় গুটি চলে যেতে পারে গর্তে।

আমার সামনে অদৃশ্য অক্ষর।
পোয়েটিক ম্যাডনেস।
ভূগোলবিদ্যা ভুলে গিয়ে আমি
জ্যামিতি আওড়াতে পারছি না।
ছুটে চলা ট্রেনের মতো প্রতিবাদ নামক শব্দটি
অনবরত হুইসেল বাজাচ্ছে আমার মাথায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর