অপৃথিবীর কোনো এক অদ্ভুত গ্রামে

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

আবু মুস্তাফিজ | 2023-08-29 02:59:05

পাখি

বস্তুত পাখিদের সম্পর্কে কিছুই জানি না
তারা ভাত দিয়ে দুধ কলা খায়
না দুধ দিয়ে ভাত কলা
ফলাহার করে কিনা তাও জানি না
এই না জানার অসুখ নিয়ে দীর্ঘদিনের এক বিসুখে পড়েছি
কিসু খেতে ভালো লাগে না
ভালো লাগলেও তাহা খেতে পাই না
বিশেষ করে নারীদের...বাড়ি বয়ে অপমান
তাই ফালতু বন্ধুদের সাথে
ঘুরতে যাই নদীর ধারে
হাওয়া খাই ফুরফুরে
বাটি ফিরি রাত করে
বউ কথা বলে না
কী এক অজানা অভিমানে
মান ভাঙাতে পারি না
অলস লাগে...
ফলে ফিরে আসি পাখিতে
কিছুই জানি না বলে
তুমুল কৌতূহলও
আছড়ে পড়ে মাটিতে
তারা ভাত দিয়ে দুধ কলা খায়
না দুধ দিয়ে ভাত কলা
ডিম পাড়ে কি পাড়ে না
নিজ বাচ্চা মারে কি মারে না
করাকরি কোথায় করে?
সমুখে না পিছনে?
ফালতু ডাল তরকারি দিয়ে
ভাত খাওয়া অব্দি কেউ কথা বলি না
না বউ না আমি
সারা ঘরজুড়ে শুধু পাখি আর পাখি

বিড়াল আর বনবিড়ালির ধাওয়া খেলে

নিরীহ বাঘ কিংবা বুড়ো বিড়ালের কাছে আমি পিছু হটি
হাঁটি পুরনো খানাখন্দে ভর্তিপ্রেমিকাদের বাড়ির রাস্তায়
যদিও রিস্কি এইসব শট খেলা, তারপরও খোলাখুলি বলি
আমার চরিত্রের ওইসব দোষ আজও গেল না
হে পিতামহ, নিহত পিতৃব্য ডাইনোশুয়োরদের মেলায়
ঘাস আর বিচালিতে ঠাঁসা, ডাঁশা পেয়ারার বুক নিয়ে
হেঁটে যায় মেয়েরা, আমিও হাঁটি বুক তদারকিতে পিছু পিছু
ভালো লাগে না, তবুভালো লাগাই হাঁটি আর হেঁটে যাওয়া দেখায়
পৃথুলা রমণীর নিতম্বের রমণ পেট ভরে খাওয়ার ইচ্ছা প্রতি মুহূর্তে হেঁটে হেঁটে মারি
হে ডাইনোশুয়োর পাপিষ্ঠ ধমনী
বিউগলের চুমুতে সুর বাজে অবিরত, মিঠাই আর মণ্ডা খাওয়ার ঝাল মেটাই নিয়ত অন্ধকারে
ভাগীরথীর তীরে ভগ্নমনোরথে
তাল তমালের বনঘেরা জঙ্গলে
চিরিক চিরিক করে মুতি
মুতি আর পিছু হটি
বিড়াল আর বনবিড়ালির ধাওয়া খেয়ে

অপৃথিবী

তবু এই নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভালো লাগে
ভালো লাগে পৃথিবীর প্রেম ও অনিশ্চয়তার ডিম ভেঙে কুসুম খাউয়া
ভালো লাগে রতিহীন গতিহীন স্মৃতিবিহীন সন্ধ্যাবেলা
গাংচিল ও সমুদ্রের সম্পর্ক মেপে সামদ্রিক হাওয়া খাউয়া
ভালো লাগে তুমাকে আমাকে এবং পরিচারকের ভালা ব্যবহারে
রাতের আহার বিহার ও কানামাছি ভো ভো খেলা
অথচ ম্যালাদিন বাদে গতরাতে
ঘুমঘোরে স্বপ্ন এসে নিয়ে গিয়েছিল
অপৃথিবীর কোনো এক অদ্ভুত গ্রামে
সেখানে লোকেরা ভাত দিয়ে দুধভাত খায়
নদী থেকে তুলে আনে মদের পাহাড়
গাংচিল গড়াতে গড়াতে বানর সাজে
লোকেরা নিঃশব্দেও হাসে না
বাসে না ভালো তুমাকে আমাকে কিংবা কাউকেও।

নীলকান্ত মণি

তবুও নীলকান্ত মণির গল্প শুনি
শুনি বিড়ালের থাবা নিঃশব্দে এগিয়ে যায়
মাছের কাঁটাভিমুখে...কাটা কলাগাছ ফাটাফাটি নাচে,
হেলেদুলে নাচে আর ঘাস খায়
গ্র্যাস খায় আর ফাটাফাটি নাচে
কেটে যায় যৌবন, কেচে যায় মৌবন
মরচেপরা অংশটুকু শুধু ঝুরঝুরে লাগে
তবু হিম্মত কার
ফালতু বকার?
ডাইনোশুয়োর কিংবা অবহেলিত খাসি
বাসি ঘাসপাতা চিবিয়ে হামাগুড়ি
খায় জীবিকার যৌবন চুষে
মিশিমার মৌবন শুষে
হেসে গড়াগড়ি খায় পাত্রে অপাত্রে
বিষে নীল, নীলকান্তমণি
তার গল্প এখনো শুনি।

তাহিতি দ্বীপের বাঁহাতি ছোকরা

তাহিতি দ্বীপপুঞ্জে এক বাঁহাতি ছোকরা ঘুরে বেড়াচ্ছিল
অযথা। সারা দিনমান জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল
নারকোল আর কেয়ার বনজুড়ে ছিল স্বাভাবিক নিস্তব্ধতা
সেই সময় এক নিহত ঘোড়া
এসে সামনে দাঁড়াল। বলল, ট্যাকে কয় ট্যাকা আছে?
বাঁহাতি ছোকরা ডান হাতে প্রাণ নিয়ে উর্ধ্বশ্বাস দৌড়ে
ঘোড়া থেকে দূরে যেতে চাইল।
কিন্তু নিহত ঘোড়া বুড়া হলেও চমৎকার গতি হারায়নি এখনো
ফলাফল: খাঁড়ার উপর ধরা পড়ল বাঁহাতি ছোকরা
ট্যাকের ট্যাকাগুলান ঘাসের মতো চিবিয়ে খেলো এট ফার্স্ট
তারপর জল চাইল খলের মতো হেসে
এইবার ইট্টুখানি পানি দে ছ্যামড়া
ডরাইলি ক্যা? এই ধরনের আলগা পিরিতি
বাঁহাতি ছোকরা দুহাতে চোখ মোছে
আর খুনখুন করে কাঁদে
তার চোখের জল মাটিতে পড়ার আগেই
পানি হিসাবে উহা গিলে ফেলে ঘোড়া
ঠিকমতো কাঁদতেও দেয় না তারে
কেয়া আর নারকোল বনে তখনও স্বাভাবিক নিস্তব্ধতা

এ সম্পর্কিত আরও খবর