নীহার লিখনের একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

নীহার লিখন | 2023-08-31 13:42:40

সার্কাস

মেলাদিন আগে দেখেছিলাম সার্কাসে পশু ও মানুষ জোঁকার আর ম্যাজিশিয়ান

সেখানে একজন আগুনখেকোও ছিল
আজ তাকে খুব মনে পড়ছে
দুধেল এক্রোবেটের উরুর সুরত ভুলে
হাতির ফুটবল খেলা, জোঁকারের কারিকুরি
আর জাদুর ইন্দ্রজাল ফেলে

আমার শুধু আগুন খাওয়ার দৃশ্যটিই মনে পড়ে থাকে

পরসমাচার

মৃত্যু চিন্তা নিয়ে প্রতিরাতে ঘুমিয়ে পড়ে এক ঝুপড়ি কামিনী গাছ, পরসমাচার জানার ইচ্ছে থাকে না এমন কোনো প্রেরকের চিঠির মতো, তবু তার ডালে ডালে পাতায় পাতায় পরদিন সকালের রোদ ঠিকরে আসে
অসংযমের প্রেম নিয়ে, পাখা ঝাঁপে পাখির প্রণয়

প্রমিত গন্ধের কাছে নাসারন্ধ্র পরাস্ত হতে হতে জীবন
আবারও সামলে নিবে গতি ও ফিকির
শাদা ফুলের দোলনের সহোদর শাদা কফিন ও একদিন জমা রয়ে যাবেই, সিমেট্রির গাছে ঝুলে থাকা চাঁদের নির্জনতায় কেউ হয়তো খুঁজবে সেই মুখ, সবিশেষ কফিনের ডালায় কার নিপুণ হ্যামারিং এ প্যারেকটি গেঁথেছিল নিরীহ কাঠে, জঠরে দাগ নিয়ে আদৌ কি মা আজও করোটিকে জাগিয়ে রেখেছে এমন এক চাঁদের মতোই; নাকি মরণের মতো কোন শাদা কামিনী, গন্ধের উঠানে টুপটাপ ঝরে পড়া শেষে পদদলিত হচ্ছে মৃত প্রেমিকার শেষ চিঠির শরীর
যার কোনো এনভেলাপ নেই, কোনো পরসমাচার জানাবার প্রাপকটিও গত হয়ে গেছে

মানুষ

মানুষ একটা বানান ভুলের মতো কিছু
আমার শৈশবের রাফ খাতায় রংচটা বলপেনের কালিতে লেখা আছে

মানুষ একটা কিছু হবে হয়তো
মৃত বকুলের মতন ও
পড়ে থাকে ধুলাবালির বইয়ের ফাঁকে

এমনকি ময়ূরের চিলচিলে পেখম
যা নিয়ে বসে আছি খোকা
কোনোদিন দেখি না তার শরীরটাকে

মানুষ একটা কিছু গ্যাস বেলুনের ভাই, বা বোন
যার উড্ডয়ন দেখা যায়
হদিসে থাকে না কাল অথবা পতন

হেঁয়ালিতে

একবার একটা শূন্যতাকে আমি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম হেঁয়ালিতে হেসে

সে অনেকগুলি ধাঁরালো তীরের ফলার মতো
সে অনেক অমাবশ্যার মতো
সে অনেকগুলো পাগলা হাতির মতো

লেজার

গম খেতে চাঁদ দেখে দেখে
তোমার বাড়ির আঙিনায়, কত যে হারিয়েছি আমি হিসাব কিতাব!

আচমকা একটা তারা, জোৎস্নায় খসে যেতে দেখে
চোখের খাঁদে কত যে ডুবিয়েছি ডিঙির গোলুই!

এইসব কথা কেউ জানবে না বলেই
বধির এ পৃথিবীতে পৌষ মাস এত মোহনীয়
এইসব কথা কেউ জানে না বলেই
বসন্তে কোকিল ডাকে ঠিকই, মনে মনে থাকে গোপনীয়

এভাবেই, কথা ও হিসাবে
একদিন উদ্ভাসিত সুন্দর অথবা নিরর্থকতায়
আমরা সব অর্থ, গান এবং নদী
পাশে নিয়ে যেতে যেতে, যে যার মতোন যেদিক খুশি চলে যাই, লেজারগুলো পড়ে থাকেই

ফেরা পথ

যেতে যেতে মনে হয়, এই যে এক গাছ ধুলায় শরীর, চুপচাপ আকাশের মতোই, প্রতিদিন যাচ্ছে অলক্ষে এতটা জীবন; এই গাছ সব ছেড়ে পথের পাশে সেদিনও কি এমনই ছিল? প্রিয় যে পথিক হেঁটে হেঁটে চলে গেছে এরকম কোনো এক গাছের মতোই; ফেলে রেখে গেল উঠান ও মেঘ ও কবুতর, এমনকি মৌসুম ও ফল, বিনিময়ে জিরানপথের রাতে পেল এক ঝাঁকবাঁধা পাখির আশ্রম, এবং তার আশ্রয় হলো পাখার অবসাদ, মৌন ঘুম, ব্যোহেমিয়ান নিরীহ বাতাস।
ফেরা পথে এমন সব গাছ, বেদেনীর তাঁবুর মতোন সাজিয়ে রাখে মূলত এক এলবাম, যার অনেক ছবির মাঝে দেখতে ইচ্ছে হয়; সেই যে পথিকটি গেল কতকাল হলো; এলবামে তার সাথে এই অশ্বথ, আর নিস্ফলা এই গাছগুলোর কোনো ছবি আছে কি না, থাকলে সেদিন তারা কেমন ছিল

ফেরা পথে মনে হয়, এইসব পৃথিবীতে আদৌ কি কোনোদিন ছিল?

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর