জিনি লকারবি ১৯৭৩ সালে On Duty in Bangladesh: The Story The Newspapers Didn’t Publish, বইয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর অনন্য অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন খ্রিস্টান মিশনারি, চট্টগ্রামে সেবিকার দায়িত্ব-ব্রত নিয়ে এসেছিলেন আটলান্টিকের ওইপার, সুদূর আমেরিকা থেকে। মিশে গিয়েছিলেন এই দেশের মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত দুঃখ-বেদনা-আশার সাথে। তাদের সঙ্গে একজন বিদেশি হয়েও তিনি একইরকমভাবে চেয়েছিলেন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা।
তাঁর নিজের জবানিতে, “আমি তখন জানতাম না যে, একদিন, অর্ধেক পৃথিবী দূরে, একটি গোটা জাতির জন্মদৃশ্যের সাক্ষী হবার সৌভাগ্য হবে আমার।” তখন কী প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি সেখানে? প্রত্যক্ষ করেছিলেন, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বস্ব-ত্যাগের প্রস্তুতি নিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা এক জাতিকে। বইটিতে এসেছে ভুখা-নাঙ্গা, প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার তবুও বাংলা ভাষাকে নিয়ে গর্ব করা ও লকারবির ভাষায়, “কবিস্বভাবের” মানুষগুলোর যাতনার অবসানকল্পে সূর্যের মতো জ্বলে ওঠা এক নেতার নেতৃত্বের কথা—তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন এমন অনেককিছু, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে আরো গভীরভাবে জানতে-বুঝতে সাহায্য করে।
সেই সময়ের বাস্তবতাকে তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতায় এমনভাবে ব্যক্ত করেন যে, তা আমাদের বিস্মিত করে। পুরো বইটিতেই তিনি আশ্চর্য এক ক্ষমতায় পক্ষপাতহীনতাকে অবলম্বন করেছেন; সত্যকে তুলে ধরার স্বার্থে। এই লেখা খুলে দেয় অনেক জটপাকানো ইতিবৃত্তের খোলস। আর দৃঢ়ভাবে উন্মোচিত করে এই জাতিসত্তার শেকড়ে লুকোনো প্রকৃত শক্তিকে। তাই এটি হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য দলিল। এমনসব ঘটনার বিবরণে এই অসামান্য স্মৃতিচারণাটি ভরে আছে, যা ইতঃপূর্বে কোথাও বর্ণিত হয়নি।
বইটির বাংলা অনুবাদ, “কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা” বার্তা২৪-এ অনুবাদক, সমালোচক ও শিল্পসংগঠক আলম খোরশেদের অনুবাদে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।