গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত ঢাবি ক্যাম্পাস

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 01:50:58

স্বপ্নের ধুলো মাখা পথে 

হাতে হাত রেখে চলা

দৃপ্ত শপথ প্রেরণা আজও 

অপরাজেয় বাংলা।

ঠিক যেন তাই। গানের কথার মতই যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র জীবন। চোখের পলকেই সময়গুলো শেষ হয়, রয়ে যায় শুধু স্মৃতি। যা আরো স্পষ্ট হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ তখন নতুন গ্র্যাজুয়েটদের দখলে থাকে। অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি, কার্জন হল, সিনেট ভবন তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। ঢাবির ৫১ তম সমাবর্তনকে ঘিরে বরাবরের মত উৎসবমুখর পরিবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাবির এমন কোন জায়গা নেই যে সেখানে গ্র্যাজুয়েটদের আনাগোনা নেই। পরিপাটি ড্রেসের উপরে কালো গাউন চাপিয়ে, কাঁধে সমাবর্তনের বিশেষ ব্যাগ ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসে দল বেঁধে হেটে বেড়াচ্ছে তারা। ছেলে মেয়ে দল বেঁধে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন। পরিচিত জায়গাগুলোতে নানান ভঙ্গিমায় ছবি তুলছেন। যেন স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করে নিচ্ছেন সময়কে। আড্ডা, ঘোরাঘুরি, ছবি তোলা এই তাদের কাজ।

৬ অক্টোবর শনিবার সমাবর্তন হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাবর্তনের ড্রেস ও উপহার বিতরণ শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। সেদিন থেকেই সমাবর্তনের বিশেষ পোশাক পড়ে চলে এসেছেন গ্র্যাজুয়েটরা।

জানতে চাইলে সমাবর্তনে অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান বার্তা২৪কে বলেন, ‘গায়ে জড়ানো কালো গাউন, মাথায় সমাবর্তন ক্যাপ, হাতে সনদপত্র। এই তিনটি নিয়ে ছবি তোলা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের স্বপ্ন। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের মত নয়।’

দুপুরে তপ্ত রোদের মধ্যেও যেন সমাবর্তন নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্লান্তি নেই। সকাল থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলছেন মালিহা। বার্তা২৪কে তিনি বলেন, ‘এই তিনদিন আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটানো সময়, বন্ধুদের হয়ত আর কখনো একসঙ্গে ফিরে পাব না। তাই শেষবারের মত তাদেরকে ফ্রেম-বন্দী করে নিচ্ছি।’

বাড়ি ফেরার পথে ঝুলতে থাকা চৈতালির গেট/

অবুঝ চোখে স্বপ্ন আকা ভাবনায় অনিঃশেষ

এ সময় চোখে পড়ে পায়ের হাঁটু পর্যন্ত ব্যান্ডেজ বাঁধা এক গ্রাজুয়েটকে। দুই হাতে ক্র্যাচে ভর দিয়ে তিনি চলছেন। তার সঙ্গে বান্ধবী। দুজনেই সমাবর্তন নিচ্ছেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়েছি। এরই মধ্যে সমবার্তনের তারিখ ঠিক হয়েছে। তাই কষ্ট হলেও সমাবর্তন মিস করতে চাই না।’ তাই পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় চলে এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে।

সমাবর্তনে অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, ‘সময়ের বিবর্তনে নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে সড়ে যেতে হয় প্রবীণদের। রয়ে যায় শুধু স্মৃতি। সমাবর্তন তাই বিশেষ অনুভূতি।’

উল্লেখ্য, ‘আগামী ৬ অক্টোবর শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। অধিভুক্ত সাত কলেজের রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্র্যাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন- জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। ৫১তম সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ২১ হাজার ১১১ জন গ্র্যাজুয়েট রেজিস্ট্রেশন করেছেন। অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১ জনকে পিএইচডি এবং ২৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর