কুবিতে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় তিন মানববন্ধন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দুইটি ও শিক্ষক সমিতির একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় শিক্ষকরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা সেখানে বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামীমুল ইসলামের উপর হওয়া হামলার বিচার চান। এ ব্যাপারে মানববন্ধনে অংশ নেয়া উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান বলেন, 'শিক্ষকরা আলোর দিশারী, সেই শিক্ষকদের উপর যখন অছাত্র বহিরাগতদের দ্বারা হামলার শিকার হয় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মেনে নিতে পারি না। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামিমুল ইসলাম স্যারের উপর আমিনুর রহমান যে বর্বরোচিত হামলা করেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমাদের যে বিচারের দাবি সে দাবি যদি না মানা হয় তাহলে শিক্ষক সমিতি যেমন উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এই প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে বাধ্য হব।'
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা গত ২৮ এপ্রিল শিক্ষকদের উপর হামলাকারী অছাত্র, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও খুনের মামলার আসামিদের সনদপত্র বাতিল, গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ব্যাপারে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী লাবিবা ইসলাম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত কয়েকদিন যাবত শিক্ষক প্রশাসনের বিভিন্ন দাবি নিয়ে দ্বন্দ চলছে। শিক্ষক সমিতি তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে প্রশাসনের সামনে বারবার দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এবার প্রশাসন কিছু বহিরাগত, অছাত্রদের দিয়ে আমাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে। এমনকি প্রশাসনের উচ্চ কর্মকর্তারাও শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে পিছপা হয়নি। যা আমরা সবাই ভিডিওতে দেখেছি। এর আগেও এই সকল বহিরাগত, অছাত্রের হাতে শিক্ষার্থীরা হেনস্তা হয়েছে। এবার শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হয়েছে। এরকম চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা দুষ্কর হয়ে যাবে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে ভয় পাবো। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়।
আমরা চাই যে বা যারা আমাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। সকল বহিরাগত, অছাত্রের ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে ক্লাস করতে পারে সেই পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, আইকিউএসি'র পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রশিদুল ইসলাম শেখ, প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ বা পদত্যাগ চেয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, 'দুই বছর ধরে উপাচার্য যে অপশাসন, স্বৈরশাসন আর মাতাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তার জন্য আজ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কমকর্তা-কর্মচারী সবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আপনি সবসময় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে, নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অন্যায়ের পথ বেছ নিয়েছন, অসত্যের পথ বেছে নিয়েছেন তাই আপনি আজকে অন্ধকারে নিমজ্জিত আছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলাদেশের সকল উপাচার্যের জন্য এক কলঙ্কের অধ্যায় তৈরি করেছেন, তিনি এক শীর্ষ সন্ত্রাসিতে পরিণত হয়েছেন।'
মনববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'এই উপাচার্য প্রথমদিন থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসদের সাথে যুক্ত এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ ছাত্রলীগের কমিটির বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টা করছেন। শিক্ষক সমিতি যখন থেকে শিক্ষকদের দাবি নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে তখন থেকেই উপাচার্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। আমাদের দাবিগুলো নিয়ে মৌখিক ও লিখিত জানিয়েছি কিন্তু তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের একজন শিক্ষককে উপাচার্য নিজে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছেন, এই সন্ত্রাসী হামলা উনি নিজেই পরিচালিত করছেন এবং ট্রেজারার, প্রক্টরও বহিরাগতদের ইশারা দিয়েছেন শিক্ষকদের উপর হামলা করার জন্য। শিক্ষার্থীদের যতটুকু ক্ষতি হয়েছে আমরা এই ক্ষতি দিনরাত কাজ করে প্রয়োজনে অনলাইন ক্লাস করে নিব। উপাচার্য ও ট্রেজারার এর অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখবো।'
এর আগে শিক্ষকদের সাত দফা দাবি না মানায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ এবং প্রক্টরের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানের পথ অবরুদ্ধ করেন। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্য, শিক্ষক এবং ছাত্রলীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে শিক্ষক সমিতি কুবি উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ-প্রক্টরসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করে একাডেমীক ও প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম বর্জন করার ঘোষণা দেন। হাতাহাতির ঘটনায় উপাচার্যপন্থী ও শিক্ষক সমিতি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।