ভিসি পদত্যাগের দাবিতে অনড় শাবির শিক্ষার্থী, আন্দোলন চলছে

, ক্যাম্পাস

শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-21 13:45:01

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ৬ষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বাসভবন ঘেরাও করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীদের এক দফা এক দাবির আন্দোলনেই  অনড় দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্লবার  সকাল ১০ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সাড়ে ১০ টার দিকে পুরো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এরপর সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উপাচার্যের অপসারণের জন্য  রাষ্ট্রপতির কাছে ডাকযোগে একটি চিঠি পাঠান তারা।  এর আগে সকাল  বিক্ষোভ মিছিল শেষে  সকাল ১১ টায় সকল শিক্ষার্থী একসাথে বসে মঙ্গলবারের কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

এসময় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী শাহেরিয়ার আবেদীন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠিটা সকলের উদ্দেশ্যে পাঠ করে শোনান। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা  বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরের অবস্থান করছিলেন।

আওয়ামী লীগের একাত্মতা

এরপর বেলা ১টার দিকে দলের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক  সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে সিলেটের নেতারা ক্যাম্পাসে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও দাবির বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবহিত হন। সবকিছু শোনার পর তিনি জানান শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন যৌক্তিক।

এসময় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা প্রমুখ।

এ সময় তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ধৈর্য ধারণের আহবান জানান। পরে তারা হল পরিদর্শন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন।

বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরাও উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সেখানেই অবস্থান নিচ্ছেন।

রোববার সন্ধ্যায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে এক দফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটি ফটক বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছে। সোমবার প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস

এদিকে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী শুরু হওয়া প্রতিবাদী আন্দোলনের পর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

সোমবার রাত পৌনে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখ্য তিন প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন।  শিক্ষার্থীদের তিন প্রতিনিধির মধ্যে ছিলেন ইয়াসির সরকার, লোক প্রশাসন বিভাগের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ, ইংরেজী বিভাগের ১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তানহা তাহসীন ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) শফিউল আলম জুয়েলের উপস্থিতিতে  ও তার মাধ্যমে মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদের ওই প্রতিনিধিরা কথা বলেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন,  গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ফোনে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি আমাদের দাবি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে দ্রুতই কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথ কি কথা হয়েছে জানতে চাইলে সাব্বির বলেন,পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সব কথা শুনেছেন। তার কাছে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের যে দাবি সেটি উল্লেখ করেছি এবং বর্তমান উপাচার্যের অধীনে আমরা আর একদিনও পড়াশোনা করতে চাই না সেটিও উল্লেখ করি। তিনি আন্দোলনকে আমি সমর্থন করেন বলে জানিয়েছেন।  যদি শান্তিপূর্ণভাবে আমরা  আন্দোলন করতে থাকি , আমাদের উপর কোনো পুলিশি হামলা হবে না। আমাদের এ দাবি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন।

বর্তমান উপাচার্যের ফরিদ উদ্দিন আহমেদের  পদত্যাগের পূর্ব  পর্যন্ত প্রতিবাদী  কর্মসূচি চালিয়ে যাবার বিষয়টি জোড়ালো ভাবে জানানো হয়ছে বলে সাব্বির জানান।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শফিউল আলম জুয়েল তিন প্রতিনিধিকে কি বলেছেন জানতে চাইলে সাব্বির বলেন ,  "পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। "

সাব্বির বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা আমাদেরকে বলেছেন  "আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দায়িত্ব তিনি নেবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া শাবি শিক্ষার্থীদের সহিংসতার পথে না যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

রবিবারের ঘটনায় পুলিশের মামলা, আসামি অজ্ঞাত ৩০০ শিক্ষার্থী

রবিবার উপাচার্যকে উদ্ধারের সময় হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘গুলিবর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশে মারধরের’ অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ।

ওই দিন শিক্ষার্থীরা ককটেল ও বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছে মামলায় এমন অভিযোগও এনে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জালালাবাদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল হান্নান মামলাটি করেন।

এসময় মামলাটি গ্রহণ করেন জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু খালেদ মামুন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, "বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটে। "

গত রবিবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশের কর্তব্যকাজে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয় এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া এজহারে দেখা যায়,  ‘২০০ থেকে ৩০০ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের কাজে বাধা দিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন এমন অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।  কর্তব্যরত পুলিশের সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করাসহ পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ৩১টি শটগানের গুলি এবং ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। "

মামলাটি তদন্তের জন্য জালালাবাদ থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মামলার বিষয়ে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু খালেদ মামুন বলেন, উদ্ভত পরিস্থিতি নিয়ে অজ্ঞাত ২০০/৩০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল এই মামলাটি করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর