জবি ছাত্র রাব্বি হত্যা: পিবিআই-সিআইডিকে তদন্তে চান বোন-সহপাঠীরা

, ক্যাম্পাস

জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 22:25:59

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ১২তম ব্যাচের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আকবর হোসাইন খান রাব্বি হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ পাঁচমাস পেরিয়ে গেলেও মেলেনি কোনো সুরাহা। বর্তমানে মামলাটি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় প্রক্রিয়াধীন।

তবে দীর্ঘদিন পরেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি না পেয়ে আকবরের পরিবার চায় মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বা পুলিশের অপরাধ দমন ইউনিটের (সিআইডি) অধীনে দেয়া হোক। এজন্য তাদের পরিবার থেকে একটি লিখিত আবেদন করলেও মামলাটি এখনো আগের অবস্থাতেই রয়েছে।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জবিসাস) কার্যালয়ে আকবর হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ও আকবরের বড় বোন লাবণী খানম আঁখি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত ২৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর ১২তম ব্যাচের মানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী মো. আকবর হুসাইন খান রাব্বি পুরান ঢাকার মেস থেকে বেরিয়ে যান এবং তার সহপাঠীরা বিভিন্ন সময়ে ফোনে যোগাযোগ করলে আশপাশে রয়েছেন বলে জানান। সর্বশেষ রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে যখন আকবরের সাথে যোগাযোগ করা হয়, তখন একটু পর বাসায় ফিরবেন বলে আকবর তার বড় বোনকে জানান।

তারা বলেন, এরপর রাত ৮টা ৫৩ মিনিটে জানা যায় আকবরকে চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন একটি ফ্লাইওভার থেকে নিচে কে বা কারা ফেলে দেয় এবং প্রতক্ষ্যদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন। এসময় তার কোমরের বাম পাশে ভোতা অস্ত্র দিয়ে গভীর এক ক্ষত ছিল। ফ্লাইওভার থেকে ফেলে দেয়ায় তার ব্রেইন অনেকাংশে থেঁতলে যায়। ব্রেইনে রক্তক্ষরণ হয়ে, টানা ৫দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ আইসিইউ তে জীবন-মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে ১ সেপ্টেম্বর ভোরে আকবর এর মৃত্যু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দীর্ঘ পাঁচমাস পার হয়ে গেলেও অপরাধীরা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে, পুলিশ এখনো সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। কে বা কারা, গত ২৭ আগস্ট রাতে পরিকল্পনা মাফিক ঢাকা হতে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে, তা এখনও এক রহস্য রয়ে গেছে। আকবর এর মোবাইল ফোনটি ঘটনার এক দুইদিনের মধ্যেই থানা থেকে লক খুলতে গিয়ে হার্ড রিসেট দেয়া হয়, ফলে তার ফোন থেকে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। পুলিশ এখনো সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি বলে জানায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সূত্র, চট্টগ্রাম খুলসী থানা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে চট্টগ্রাম খুলসী থানা পুলিশ এটিকে পরিকল্পনা মাফিক হত্যা বলে নিশ্চিত করে।

সংবাদ সম্মেলনে আকবরের সহপাঠীরা বলেন, ‘আমাদের সহপাঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের একজন সহপাঠীর এমন রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। দ্রুত সঠিক তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হলে অনতিবিলম্বে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো। তারা সকলেই শঙ্কা প্রকাশ করে, তদন্তে এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণে এর অগ্রগতি ব্যহত হচ্ছে। এজন্য তারা বাংলাদেশ পুলিশের দায়সারা ভাবকে প্রধান কারণ মনে করছেন।’

তারা আরও বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনেক মেধা, শ্রম দিয়ে এ পর্যায়ে আসে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে এতগুলো বছর পড়াশোনা, কত স্বপ্ন কত আশা, আকবর এর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হওয়ার, সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। ঠিক ফাইনাল পরিক্ষার আগে আগে তার এ রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড, এটা মেনে নেয়া তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব সকলের জন্য কষ্টকর।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজ বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, তার ল্যাপটপ সিআইডি’র ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর