সেশনজটে নাকাল শেকৃবি, হতাশ শিক্ষার্থীরা

বিবিধ, ক্যাম্পাস

শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-08-28 08:54:03

রাজধানী ঢাকার অদূরে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত অর্ধ দশকে সেশনজট ছাড়া কোনো ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা চুকিয়ে বের হতে পেরেছে কিনা সেই তথ্য নেই। প্রতিটি ব্যাচকেই পড়তে হচ্ছে ছয় মাস এক বছর কিংবা দুই বছরের সেশনজটে। কোনো কোনো ব্যাচের তিন বছরে প্রথমবর্ষ শেষ করার রেকর্ডও রয়েছে। তবে প্রশাসন কিংবা শিক্ষার্থী কারা এই সমস্যার জন্য মূলত দায়ী তা খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি দেখেই হয়তো এখনো চলমান সেশনজটের এই চক্রখেলা। অনেকটা বাধ্যগত আধুভাই হওয়ার এক বিশেষ কারখানা যেন শেকৃবি।

দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে করোনা মহামারীর কারণে সেশনজটের সৃষ্টি হলেও শেকৃবিতে আগে থেকে বিরাজমান সেশনজট করোনা মহামারীর কারণে আরেকটু দীর্ঘায়িত হয়েছে। তবে বর্তমান প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সদিচ্ছার কারণে সেশনজট কমার পথ কিছুটা মসৃণ হলেও কেন যেন আবার তা কোনো এক গোলচক্রে পরে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে।

এবিষয়ে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সেশনজটে আটকে আছি। সেশনজট কাটিয়ে ওঠা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছুটা কঠিন। কারণ আমরা সেমিস্টার সিস্টেমে পড়াশোনা করি, যার কারণে চাইলেই দ্রুত সেমিস্টার শেষ করে আগানো কঠিন। এর থেকেও বড় বিষয় হলো আমাদের সাথে অনেকেই আছে যারা ক্যাম্পাসকে খুবই ভালোবাসে। এজন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার খুব বেশি ইচ্ছা নেই। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পরীক্ষা শেষ করার উদ্যোগ নিলেও ক্যাম্পাসে থাকার তীব্র ইচ্ছার কারণে তারা সেশনজটের পথকেই বেছে নেয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে ২০১৭ সালে ভর্তি হওয়া ৭৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ২০২০ সালে স্নাতক শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তারা লেভেল-৪, সেমিষ্টার-১ এ অধ্যায়নরত। ৫ বছর পেরিয়ে ৬ বছর হতে চলেছে তবুও স্নাতক শেষ ঠিক কবে হবে তার নিশ্চয়তা নেই।

একইভাবে ২০১৮ সালে ভর্তি হওয়া ৭৭ ব্যাচ লে-৩, সে-১ এ,২০১৯ সালের ৭৮ ব্যাচ লে-২, সে-১ এ এবং সর্বশেষ ২০২০ এ ভর্তি হওয়া ৭৯ ব্যাচ এখনো লে-১, সে-১ এ অধ্যায়নরত। ৭৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২ বছর ভর্তি হলেও এখনো শেষ হয়নি ৬ মাসের ১টি সেমিষ্টার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী চরম হতাশা নিয়ে বলেন, ‘একই বছরে ভর্তি হওয়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিসিএসসহ অন্যান্য পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে আর আমরা এখনো স্নাতক শেষ হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছি। স্নাতক শেষ করতেই যদি ২৫/২৬ বছর লেগে যায় তাহলে আমরা চাকরির প্রস্তুতি কবে নিব। ৩০ বছরের আগে নিজেদেরকে কোনো জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারব কিনা তা মঙ্গল গ্রহে মানুষ থাকতে পারবে কিনা সেই রহস্যের মতই অজানা।’

শেকৃবির সেশনজটের সমাধানে প্রশাসনের ভূমিকা কিরূপ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো.ফরহাদ হোসাইন বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করতে বেশ পিছিয়ে আছে । তবে আমরা যতদ্রুত সম্ভব অনলাইনে ক্লাস নিয়ে এবং স্বশরীরে পরীক্ষা নিয়ে সেশন জট কমানোর চেষ্টা করছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর