ঢাবি জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির ৩৭ বছর আজ

বিবিধ, ক্যাম্পাস

আরিফ জাওয়াদ, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 15:25:46

আজ ‘জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডি দিবস’। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর দিনটি ছিল মঙ্গলবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের চিত্রও ছিল নিত্যদিনের মত। ওইদিন রাতেও সবাই ব্যস্ত সময় পার করছিল। এদিকে রাত পেরোলে দুর্গা পূজার ছুটিতে বাসায় যাবে অনেকে।

রাত তখন পৌনে নয়টা, হলের ১৫০ বছরের পুরনো অনুদ্বৈপায়ন নামের ভবনের দোতলার টিভি কক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সম্প্রচার হওয়া মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘শুকতারা’ দেখছিলেন ২৫০-৩০০ জনের মত। হঠাৎ বিকট শব্দে ছাদের মাঝখানের অংশ ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো কক্ষ।

ঘটনাস্থলেই মারা যান ৩৪ জন। পরে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ২৬ জন ছিলেন ছাত্র, ১৩ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও অতিথি। আহত হন শতাধিক। কোন কোন পত্রিকায় আহতের সংখ্যা ৪০০ প্রকাশ করে। আহত হয় ৩০০ উপর। আহতদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে যান চিরতরে। আজ সেই ট্র্যাজেডির ৩৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে।

এরপর থেকে ঢাবি কর্তৃপক্ষ নিহতদের স্মরণে ‘ঢাবি শোক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। আজ দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এই ঘটনায় নিহতদের স্মৃতি রক্ষাতে পরবর্তী সময়ে এখানে নির্মিত হয় ‘অক্টোবর স্মৃতিভবন’। তাদের স্মরণে অক্টোবর ভবনের নিচতলায় একটি ছোট জাদুঘর আছে। সেদিনের ব্যবহৃত টিভি রাখা আছে এই জাদুঘরে। মৃত্যুবরণ করা বেশ কয়েকজনের ছবিও আছে সেখানে। এছাড়া ভবনটির সামনে নিহতদের স্মরণে তাদের নাম সংবলিত একটি নামফলক স্থাপন করা হয়েছে।

অক্টোবর স্মৃতিভবন: জগন্নাথ হল এলাকায় যেখানে ‘অক্টোবর স্মৃতিভবন’, সেখানে ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন বসতো। একে ‘পরিষদ ভবন’ বা অ্যাসেম্বলি হল বলা হতো। এ ভবনটি ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবনটিকে ছাত্রদের আবাসিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জগন্নাথ হলের সঙ্গে যুক্ত করে।

একাত্তরের শহীদ আবাসিক শিক্ষক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের নামে এ পরিষদ ভবন বা অ্যাসেম্বলি হলের নামকরণ করা হয় ‘অনুদ্বৈপায়ন ভবন’। প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো এই ভবনটিকে আগেই বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

ভয়াল সেই কাল রাত: ব্রিটিশ শাসনামলে চুন, সুরকি, লোহার রডের বিম দিয়ে তৈরি এ ভবন ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের বিনোদন ব্যবস্থা হিসেবে এখানেই একটি বড় রঙিন টেলিভিশন স্থাপন করে। ১৫ অক্টোবর দিনটি ছিল দুর্যোগপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে মুষলধারে বৃষ্টি হয় এবং রাজধানী ঢাকার ওপর দিয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াসহ ঝড় বয়ে যায়। সারাদিন ধরেই ছিল টিপটিপ বৃষ্টি। আর এ জন্যই পলেস্তারা নরম হয়ে ধসে পড়ে ছাদটি। এরপরই মর্মান্তিক দৃশ্যের সম্মুখীন হয় বিশ্ববাসী।

এদিন রাত সাড়ে ৮টা থেকে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত ধারাবাহিক নাটক ‘শুকতারা’ প্রচার হচ্ছিল। নাটকে অভিনয় করেছিলেন জগন্নাথ হলের ছাত্র শুভ্র দেব। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নাটকটি দেখার জন্য সমবেত হয় বহু ছাত্র। রাত প্রায় পৌনে ৯টার দিকে ছাত্রদের ওপর ভেঙে পড়ে ভবনের ছাদটি।

শোক দিবসে ঢাবির কর্মসূচি: জগন্নাথ হলে সংঘটিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যে সকল ছাত্র, কর্মচারী ও অতিথি নিহত হয়েছেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করা হয়।

শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবন, সকল হল এবং হোস্টেলে কালো পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ; সকাল সাড়ে ৭টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শোক র‍্যালির সহকারে জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে গমন, পুস্পস্তবক অর্পণ এবং নীরবতা পালন।

সকাল ৮টায় জগন্নাথ হল প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অক্টোবর স্মৃতি ভবনস্থ টিভি কক্ষে আলোচনা সভা; ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা সভা এবং বাদ আছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআ'সহ সকল হল মসজিদে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত। এছাড়া, হল প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সকাল ১০টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিহতদের তৈলচিত্র ও তৎসম্পর্কিত দ্রব্যাদি প্রদর্শন করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর