ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বামধারার সংগঠন গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ, বাসায় ফোন, পুলিশে তুলে দেয়া হবে এমন হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোররাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২২৩ নং রুমে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামির সাদিক লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ছাত্র ও ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১টায় অভিযুক্ত দুজন সারা রাত আমাকে মানসিক টর্চার করে এবং মারধরের হুমকি দেয়।
লিখিত অভিযোগে আরও বলেন, এমনকি তারা আমার বাবা-মাকে ফোন করে আমাকে নিয়ে যেতে বলে। অন্যথায় তারা আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। যা আমার বাবা-মাকেও সারা রাত দুশ্চিন্তার মধ্যে রাখে। এমতাবস্থায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আজ সকালে আমার বাবা-মা ঢাকায় এসেছে। তারা আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, আমি নিজেও আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে, আমাকে এবং আমার বাবা-মাকে যে মানসিক নির্যাতন করেছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। হলে আমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
এ ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আহম্মদ উল্লাহ এবং পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক রিজভীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত দু’জনই হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুনের অনুসারী। আজহারুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।
অভিযুক্ত আহমাদ উল্লাহ আশরাফ ও রিজভী হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুন বলেন, এখানে মারামারি বা নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার কাছে ভিন্ন আদর্শের, সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার কিছু বই পাওয়ার কারণে তাকে শুধু জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। বাবা-মাকে ডেকে আনার যে অভিযোগ সেটাও মিথ্যা। আর তার পরিবারের সঙ্গে যে ছেলে কথা বলেছিল সে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণায় বিশ্বাস করি এবং যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছাত্র রাজনীতি করে তাদের সবার সঙ্গে আমাদের একটি ইতিবাচক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করি। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হলে এটা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত সকলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে। এখন তার নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।