ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগ নেত্রীর দ্বারা রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার অভিযোগপত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম’সহ নাম না জানা আরও অন্তত ৭-৮ জন দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র-উপদেষ্টা ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমার ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হওয়ার জন্য আমি ৭ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ৩০৬নং রুমে আমার এলাকার (পাবনা) পরিচিত এক আপুর রুমে গেস্ট হিসেবে উঠি। যথাযথভাবে সবাইকে সম্মানপূর্বক রুমে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করি। এরপর ১১ ও ১২ তারিখে ২ দফায় আমি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক ছাত্রী এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম’সহ নাম না জানা আরও অন্তত ৭-৮ জন দ্বারা র্যাগিংয়ের নামে চরমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হই এবং তারা বিবস্ত্র করে আমার গোপন ভিডিও ধারণ করে রাখেন। এমনকি তারা আমাকে জীবননাশের হুমকিও প্রদান করেন। উক্ত নির্যাতনের বিবরণ দরখাস্তের সাথে সংযুক্ত করেছি। র্যাগিংয়ের নামে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করার ঘটনার সুষ্ঠু বিচারসহ আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, ওই মেয়ে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তার কোনো ভিত্তি নেই। এটা প্রমাণের জন্য আমার কাছে যথেষ্ট তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে। আমি আমার দিক থেকে ঘটনাটি তুলে ধরে প্রভোস্ট, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত দিয়েছি।
শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম জানান, মেয়েটি একটি অভিযোগ করেছিল অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ড. আওসানুল হকের নেতৃত্বে ৪ বা ৫ সদস্যাবশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। পরবর্তী পদক্ষেপ গুলোর বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে ১০ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রিপোর্ট পেলে প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন জানান, এইটা সত্য যে আমরা অবিভাবকের আসনে আছি আর ব্যক্তিগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমরা রাগিং শব্দটিকে উচ্চারণই করতে চাইনা। আমাদের পুরো শিক্ষাজীবনে আমরা এই শব্দটির সম্মুখীন কোনো দিন হইনি এবং শুনিনি। তবে এখন এই বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীটি আমার কাছে আবেদন করেছে এবং আবেদন পত্রটি আমি পড়ে দেখেছি। কিছুক্ষণ আগে যাদের নামে আবেদন করা হয়েছিল তাদের পক্ষ থেকেও আরেকটি আবেদন পত্র এসেছে। আমি এই দুইপক্ষকেই ডাকবো এবং বিষয়টি শুনবো। যদি ঘটনাটি সত্য হয়ে থাকে তবে এটা দুঃখজনক। আর অবশ্যই এইটার সমাধান প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে। ঘটনার সত্যতা আমাদের জানা প্রয়োজন। প্রক্টরিয়াল বডির সাথে আলোচনা করে একটি সম্মিলিত সিদ্ধন্ত নেওয়া হবে।
ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ছাত্রলীগ থেকে প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করা হবে। যেহেতু অভিযোগ ছাত্রলীগ সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ভুক্তভোগীর পাশে ছাত্রলীগ দাঁড়াবে। তবে যদি ঘটনাটি মিথ্যা হয় কিংবা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযোগ তোলা হয় তবে সেক্ষেত্রেও প্রশাসনের কাছে ছাত্রলীগ বিচারের দাবি জানাবে।
তিনি আরো বলেন, র্যাগিংকে ছাত্রলীগ কখনো প্রশ্রয় দেয়নি ভবিষ্যতেও তার ব্যতিক্রম হবেনা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এর আগেই আমাদের কাছে হলে অবৈধ ভাবে থাকার ব্যাপারে অভিযোগ আসে। কিন্তু তখনও আমরা প্রভোস্ট স্যার কে অনুরোধ করেছিলাম তাকে যেনো হল থেকে না বের করে দেয়া হয় এবং তার থাকারও ব্যবস্থা করেছি। পরবর্তীতে এসব ঘটনা সত্যি অনাকাঙ্ক্ষিত।
উল্লেখ্য, ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও শেখ হাসিনা হলের প্রজাপতি ব্লকের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ফুলপরী খাতুন নামে ছাত্রীর অভিযোগকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে রাতভর আন্দোলন করেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তারা রাত ২টার দিকে আবাসিক হল থেকে বেরিয়ে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান করেন এবং ফুলপরীর বহিষ্কার দাবি করেন। একই সাথে প্রশাসনের সাড়া না পাওয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য এবং প্রক্টরের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে স্লোগান দেন।