১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুবার্ষিকী জাতীয় শিক্ষক দিবসের স্বীকৃতি না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহার সামাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা না হওয়া খুবই কষ্টের। অথচ ড. জোহা ছিলেন বাঙালি প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। তার এই আত্মহুতি সেদিন বাঙালি স্বাধিকার আন্দোলনকে তরান্বিত করেছিল। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্র ও ছাত্র নেতা হিসেবে ক্ষুব্ধ। কেননা ড. জোহা স্যারের মৃত্যুর এতো বছর হয়ে গেলেও দিনটি কেবল এই ক্যাম্পাসেই পালিত হয়! জাতীয়ভাবে দিনটি এখন স্বীকৃতি পায় নি। অথচ তার এই আত্মাহুতি বাঙালি জাতীয় সংগ্রামে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিল। এই ঘটনার পর গণঅভ্যুত্থান দুর্বার রূপ ধারণ করেছিল। ফলে বাধ্য হয়ে পাক শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে। বাঙালি স্বাধীনতার আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়। অথচ এই জোহা দিবস এখনো জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক বলে জানান তিনি।
পুষ্পস্তবক অর্পণকালে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবাইদুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক এম তারেক নুর প্রমুখ।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। একই দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, রসায়ন বিভাগ, রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিক সমিতি ও প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিন বিশেষ এই দিবসটি জাতীয়করণের দাবিতে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম আলো বন্ধুসভার নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে এবং অ্যালামনাই এসোসিয়েশন ও শহীদ শামসুজ্জোহা হল প্রশাসনের উদ্যোগে বিকেল ৫টায় হল প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সিনেট ভবনে জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা’ শীর্ষক বক্তব্য দেন রাবির রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন রাবি এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম, প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসান আহমদের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামানিক, বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জোহা হল প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনা সভায় হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক একরামুল ইসলামের সভাপতিত্বে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয়, মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট্য ইতিহাসবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম।
উভয় আলোচনা সভায় বক্তারা শহীদ ড. শামসুজ্জোহার কর্মময় জীবন ও আত্মত্যাগ নিয়ে আলোচনা করেন এবং আলোচনায় ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আর্কষণ করেন।