জবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থী সংকট

বিবিধ, ক্যাম্পাস

নিজাম উদ্দিন শামীম, জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-08-30 05:58:15

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নানা বিধি নিষেধ থাকায় শিক্ষার্থী সংকটে পড়ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কোনো ধরনের বই এবং ল্যাপটপসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো কিছু নিয়ে ঢুকতে না দেওয়াতে শিক্ষার্থীরা এখন লাইব্রেরি মুখো হচ্ছে না। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে তিনশ জন ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ রুমে মাত্র ১৫/২০ জন শিক্ষার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায়। মূল দরজার সামনে জটলা বেধে পড়াশুনা করছেন কয়েকজন। যেখানে বই নিয়ে যাওয়ার বৈধতা আছে। এছাড়া ভেতরে কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া তেমন কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি।

ভেতরে ডান পাশে ই-লাইব্রেরিতে দুই একটি কম্পিউটার ছাড়া বাকি কম্পিউটারগুলো নষ্ট পড়ে আছে। এছাড়া ভেতরে বইয়ের সংখ্যা খুবই সীমিত। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় বই পড়ার সুযোগ কম থাকাতে তারা সহসাই লাইব্রেরি মুখো হচ্ছে না।

জবির নতুন ভবনের ৬ তলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা এর পরিবর্তে সকাল ৮টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে নানা ধরনের সংকট আর সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থী হারাচ্ছে লাইব্রেরিটি।

লাইব্রেরিতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,এখানে সিলেবাস অনুযায়ী বই পাওয়া যায় না। বই পাওয়া গেলেও নেই সর্বশেষ সংস্করণ। ছেঁড়া ও পুরাতন বইয়ের পাতায় পাতায় আঁকিবুঁকি করা। অনেক বই পড়ার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। কিছু বইয়ের বিশেষ অংশ প্রয়োজন হলেও নেই ফটোকপি করার ব্যবস্থা। এছাড়া এখানে ছেলেদের জন্য স্বল্প পরিসরে নামাজের ব্যবস্থা থাকলেও নেই মেয়েদের জন্য নামাজের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। নেই কোনো খাবার পানির তেমন সুবিধা।

লাইব্রেরিতে বই সংগ্রহের জন্য প্রবেশমুখেই রয়েছে ক্যাটালগ ব্যবস্থা। পুরাতন এ ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্যাটালগে আছে ১০০ এর কাছাকাছি টোকেন, যেখান থেকে বই খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। টোকেন থাকলেও অধিকাংশ সময় পাওয়া যায় না সংশ্লিষ্ট বই। আবার সব টোকেন নেই। টোকেনগুলোও অগোছালোভাবে পড়ে আছে। লাইব্রেরির কার্ডে নেওয়া যায় একটিমাত্র বই। লাইব্রেরি কার্ড করার সুযোগ সপ্তাহের মঙ্গলবার ১০-১১টা। ফলে সিংহভাগ শিক্ষার্থীর নেই লাইব্রেরি কার্ড।

লাইব্রেরি সূত্রে জানা যায়, লাইব্রেরির জন্য নিয়মিত বই কেনা হয় না। আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য নেই পর্যাপ্ত জানালা। কর্মকর্তাদের রুমে এসি থাকলেও রিডিং রুম শিক্ষার্থীদের ভরসা বৈদ্যুতিক পাখা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, লাইব্রেরিতে নেই খাবার পানির ব্যবস্থা, মেয়েদের নামাজের জায়গা। শিক্ষার্থীরা সাধারণত কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের টয়লেট ব্যবহার করলেও ক্যাম্পাস ছুটির পর সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সামান্য বিষয়েও তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন লাইব্রেরিতে কর্মরত কর্মচারীরা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, প্রথম কয়েকদিন লাইব্রেরিতে আসতাম কিন্তু বই নিয়ে আসতে না দেওয়া, এছাড়া প্রতিদিন লাইব্রেরি কার্ড নিয়ে আসা লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই না পাওয়ার কারণে লাইব্রেরিতে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়েছি।

গ্রন্থাগারিক মো: এনামুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার উপযোগী করে তুলতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। নতুন বই ক্রয়ের পাশাপাশি বিভাগীয় সেমিনারে বই রাখার ব্যবস্থা করছি।

শিক্ষার্থীদের বই নিয়ে আনতে না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন শিক্ষার্থীরা অন্য বইয়ের পাশাপাশি লাইব্রেরির বই নিয়ে যায়। এছাড়াও কাটা ছেড়া করে বই রেখে যায়।

লাইব্রেরির সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান লাইব্রেরিটি বিশ্ববিদ্যালয় উপযোগী নয়। আমরা বর্তমান লাইব্রেরিকে ই-লাইব্রেরিতে পরিণত করবো। এ লক্ষ্যে ৪০টি কম্পিউটার অর্ডার করা হয়েছে।’

বিশ্বমানের লাইব্রেরি গড়তে কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্বমানের লাইব্রেরি করতে আলাদা ভবন, পরিকল্পিত রিডিং রুম, রেফারেন্স রুম, পর্যাপ্ত বইয়ের দরকার। কিন্তু এখানে পরিসর বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই নতুন ক্যাম্পাসে পরিকল্পনা মাফিক প্রয়োজনীয় সকল কিছু করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর