অতিথি পাখিতে মুখর জাবি ক্যাম্পাস

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রুদ্র আজাদ,জাবি করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-21 21:54:44

ভোরের কুয়াশার বুক ঠেলে সকালের রৌদ্র যখন লাল শাপলা ফুলের উপরে হালকা স্পর্শ ঠেকিয়ে যায়। তার সঙ্গে যেন চারপাশের অতিথিরা গল্পের পশরা মেলে কিচির মিচির করতে থাকে। মূহুর্তে যেন স্বর্গভূমি হয়ে উঠে দেশের অন্যতম সুন্দর নগর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস।

বিশ্ববিদ্যালয়টির সৌন্দর্য যেন ভুবন জুড়ানো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোন সবুজের দ্বীপ। যেদিকে দু’চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। কৃত্রিমভাবে লাগানো গাছের সারি আর প্রাকৃতিক লতাগুল্ম যেন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সবুজের দ্বীপ বানিয়ে দিয়েছে। ডেইরী গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলে সারি সারি সবুজ বৃক্ষগুলো যেন আপনাকে অভ্যর্থনা জানাতে ঠায় দাড়িয়ে আছে। আরও ভেতরে গেলে সৌন্দর্য যেন আরও বেশি। বোটানিক্যাল গার্ডেনের ফুলের সমারোহ, সুইজারল্যান্ড, লেকের লাল শাপলা সবকিছু যেন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গোটা ক্যাম্পাসটাকে দেখে মনে হবে সৌন্দর্যের রাণী যেন নিজ হাতে গড়েছেন।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে একেকটি ঋতু আসে একেক রকম রূপ নিয়ে। যেখানে ঋতু বদলের সাথে সাথে বদলে যায় প্রিয় মাতৃভূমির রূপ। সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ-লাবণ্যে পরিবর্তন আসবে না তা কি হয়। আর এই রূপ বদলের বদলের পালে নতুন হাওয়া সংযোজনা করেছে অতিথি পাখি।

প্রতি বছর শীতে সাধারণত সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, জিনজিয়াং, নেপাল প্রভৃতি হিমালয়ের উত্তরের দেশগুলোতে প্রচুর তুষারপাত হয়। এছাড়া এসময় খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দেয়। কিছু কিছু পাখি তাই চলে যায় দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল নাকি প্রায় ২২ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে অন্য দেশে চলে যায়। আমাদের দেশে যেসব অতিথি পাখি আসে তারা সাধারণত এত পথ পাড়ি দিয়ে আসেনা। এদেশে আসা পাখির বেশিরভাগ হিমালয়ের উত্তর দিকের অঞ্চলগুলো থেকে আসে। তবে ইউরোপ ও সাইবেরিয়া থেকেও আসে। এসব পাখিরা সাধারণত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে দেশে প্রবেশ করে।

আমাদের দেশে আগত অতিথি পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নর্দান গিনটেইল। এছাড়া বালি হাঁস, কালিউ, খয়রা চকাচকি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, সারস, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, রাজসরালি, পাতিকুট, নরদাম সুবেলার, প্যালাস ফিস ঈগল, পিনটেইল, কমন পোচার্ড, রাজ হাঁস, লেঞ্জা, সরালি, চিতি, গিরিয়া, খঞ্জনা, জলপিপি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, পান্তামুখি, চখাচখি, পাতিবাটান, কটনচিল, কমনচিল, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং উল্লেখযোগ্য।

প্রায় ৭০০ প্রজাতির অতিথি পাখির মধ্যে বাংলাদেশ আসে ৩০০ প্রজাতির অতিথি পাখি। এর মধ্যে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে প্রায় ৬০ প্রজাতির। জাবির আঙ্গিনায় যেসব অতিথি পাখির আনাগোনা তা হল- সরাল, পাতারি, চিতাটুপি, জলপিপি, গার্গেনি, মুরগ্যাধি, মানিকজোড়, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, কোম্বডাক, লাল গুড়গুটি, পিচার্ড ইত্যাদি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন লেকগুলো মিশে আসে লাল, সাদা, নীল শাপলা। এসব শাপলার জালের মাঝে অতিথি পাখির খুনসুটি, উড়াউড়ি দেখলে সত্যিই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। ব্যস্ত শহুরে জীবনে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে প্রতি বছর বহু দর্শনার্থী ক্যাম্পাসে আসেন। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখে পাখিদের উড়াউড়ি। পড়ন্ত বিকালে সবুজের রাজধানীর লেকগুলোতে অতিথি পাখিদের এসব দৃশ্য যেন কল্পনার রাজ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।

শীত পুরোপুরি শুরুর আগে থেকেই এখানে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। তবে কিছু সমস্যা অতিথি পাখির বসবাসের জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। যেমন লেক অব্যবস্থাপনা, অযাচিত গাড়ির হর্ন, পাখির আবাসস্থলকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মানুষ চলাচল, রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাখির খাবার নষ্ট করা ইত্যাদি। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হবে অতিথি পাখির জন্য শ্রেষ্ঠ আবাসস্থল আর ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে বহুগুণে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর