আবাসিক হলে থাকা অবৈধ ছাত্ররা জাবিতে মাদকের প্রসার ঘটাচ্ছে

বিবিধ, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-02-11 18:42:21

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে থাকা অবৈধ ছাত্ররা অবাধে চাঁদাবাজি ও মাদকের প্রসার ঘটাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম।

রোববার (১১ জানুয়ারি) বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে সম্প্রতি গণধর্ষণের ঘটনায় নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক নজরুল তার বক্তব্যে বলেন, ২৫ বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ন্যায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে এবং একই ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। ধর্ষণের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে মাদক। অসংখ্য শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে গেছে মাদকের ভয়াল থাবায়। উপাচার্য এসব অপকর্ম সম্পর্কে জেনেও যদি না জানার ভান করেন, তাহলে তিনি পদে থাকার অযোগ্য। বিশমাইল এলাকায় ছাত্রদল একটা স্লোগান দিলে তিন মিনিটের মধ্যে ছাত্রলীগের ছেলেপেলেরা দৌড়ানো শুরু করে। অথচ সাত-আটঘণ্টা ধরে একটি গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে, এটা তাদের চোখেই পড়েনি।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, র‍্যাব বলেছে জাবি প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছেন, ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেছেন জাবি প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে জাবি উপাচার্য এবং প্রশাসনের দায়িত্ব কি শুধু বাসভবনে থাকা? আর উপাচার্য ভবনে উপাচার্য পদ উপভোগ করা নাকি? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান জড়িত এখানে। যদি আপনি জাহাঙ্গীরনগরের অভিভাবক ও উপাচার্য হিসেবে মনে করেন আপনি ব্যর্থ হয়েছেন তাহলে এটা স্বীকার করতে সমস্যা কোথায়?

তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি এটা কোনো দলের প্রোগ্রাম নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও আন্দোলন। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে দাঁড়িয়েছি বলে রাজনৈতিক বক্তব্য ভাবার কোনো কারণ নেই, পতাকাটা বাঁচানোর প্রশ্ন এসেছে। ১৯৯৮ সাল থেকে আমরা দেখেছি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং ক্ষমতায় থেকে ধর্ষক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চায়। আমরা জানি র‍্যাব এবং ইউজিসি অভিযোগ তুলেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। আসুন দলমত নির্বিশেষে নিপীড়কের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হই।

প্রশাসন যদি অছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো, তাহলে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জঘন্য দিন দেখতে হতো না মন্তব্য করে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অছাত্রদের হল থেকে বের করার জন্য যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ছাত্রকে হল থেকে বের করতে পেরেছে? এখন পর্যন্ত অছাত্রদের কোনো তালিকা করতে পেরেছে? আমরা দাবি জানাচ্ছি প্রতিটি হলের বৈধ শিক্ষার্থীদের রুম অ্যালটমেন্টের তালিকা প্রকাশ করা হোক। গতবছর জুন মাসে মীর মোশারফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী প্রত্যয় হলের অবৈধ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করার জন্য অনশনে বসেছিলেন। তখন প্রশাসন তাকে আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ হয়নি।

ছাত্রলীগের সিট মন্ত্রীরা জাহাঙ্গীরনগরের বাইশটি হল নিয়ন্ত্রণ করছেন অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন এমন অবস্থায় পরিণত হয়েছে যে মাদকদ্রব্য থেকে শুরু করে সকল ধরনের অপকর্ম চলছে। জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষমতাসীনদের যে ছাত্র সংগঠন অবস্থান করছে তাদের বেশিরভাগেরই ছাত্রত্ব নেই। তারা কীভাবে হলে অবস্থান করে? প্রশাসন কী করছে? কেন জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে সিট সংকট হলো, গণরুম কালচার শুরু হলো? একটাই কারণ প্রশাসনের ব্যর্থতা। বিরাট সাইজের প্রক্টরিয়াল বডি রয়েছে। তিনটি গাড়ি ব্যবহার করে কিন্তু তারা হলগুলোর খোঁজ নিতে পারে না। পাঁচ কার্যদিবস পার হলো, এখনো কোনো ছাত্রকে বের করতে পারেনি প্রশাসন।

৯৮-এর আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমস্ত অনিয়মকে দূর করা হয়েছিল দাবি করে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র জায়গায় আবার কেন এই অনৈতিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে? কারা এর জন্য দায়ী তা খুঁজে বের করতে হবে। হলগুলোতে অবাধে অছাত্ররা থাকছে। আমি যখন হাউজ টিউটর ও ওয়ার্ডেন ছিলাম তখন রুমগুলোতে গিয়ে-গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু বর্তমান শিক্ষকরা তা করছেন না। অবশ্যই হলগুলোতে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা দরকার। কে কোন রুমে থাকে তার তথ্য হল প্রশাসনের কাছে থাকা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পাঁচদিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল আজ তার শেষ দিন। উপাচার্যকে বলছি যদি প্রশাসনে থাকেন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তাহলে আপনাকে স্যালুট করব। আর না পারলে এর দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে।

অধ্যাপক মো. শামছুল আলমের সভাপতিত্বে ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাসরীন সুলতানা, অধ্যাপক রাশিদুল আলম, অধ্যাপক আমির হোসেন ভূঁইয়া, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর