আবারও ঢাবি অধ্যাপক জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-02-28 21:01:31

আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে অভিযোগপত্র দেন অভিযোগকারী নারী শিক্ষার্থী।

জানা যায়, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে রাজধানীর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্স পড়িয়েছিলেন। সেখানকার এক সাবেক নারী শিক্ষার্থী এ অভিযোগ এনেছেন।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিয়ের কথা বলে দিনের পর দিন যৌনতা সম্পর্কিত অশ্লীল কথোপকথন করেন। কথা বলতে না চাইলে শ্রেণিকক্ষে মানসিক নিপীড়ন, ধর্মচর্চা, পোশাক ও গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ এনেছেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ একজন ‘মানসিক বিকারগ্রস্থ’ ও ‘সিরিয়াল হ্যারাসার’। ওই শিক্ষার্থী দাবি করেন, তিনি নিজেই অন্তত আরও তিনজন শিক্ষার্থীর কথা জানেন, যাদের অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং একইভাবে প্রতারণা করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ঘটনার বিবরণে অভিযোগপত্রে বলেন, আমি ক্লাসের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হওয়ায় অধ্যাপক নাদির জুনাইদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হত। প্রথমত উনি নিয়মিত আমাকে ফোন দিতেন। কিন্তু সমস্যা হলো উনি ব্যক্তিগত অনেক তথ্য জিজ্ঞেস করতেন। আমাকে এমনও জিজ্ঞেস করেছেন, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কি না। এসব নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে চাইতেন।’

তিনি আরও বলেন, উনি আমাকে যখন এইভাবে ফোন বা ভিডিও কল দিতেন, আমি খুবই বিব্রত হতাম। আমি প্রায়ই ওনার ফোন না ধরার চেষ্টা করতাম, কিন্তু সেটার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরবর্তী ক্লাসে দেখা যেত। ফোন না ধরায় আমাকে ক্লাসে নানাভাবে হেনস্তা করতে চাইতেন। ক্লাসে এভাবে হেনস্তার পর উনি আবারও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।’

তিনি অভিযোগ করেন, অনেকটা বাধ্য হয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে ওনার ফোন এবং ভিডিও কল রিসিভ করতাম। তখন ভিডিও কলে বলতেন, একটু তোমার চেহারাটা দেখি, তোমার চুলটা একটু দেখি, তোমার জুম পিক দেখি। আমার কয়েকবার মনে হয়েছে, তিনি হস্তমৈথুন করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে আরও লেখেন, উনি আমাকে শারীরিক স্পর্শ বা সেরকম কিছু করেননি। কিন্তু বিয়ের কথা বলে আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন কথোপকথন চালিয়ে গেছেন। উনি প্রায় অশ্লীল কথাবার্তা বলতেন। নানান রকম যৌন উত্তেজনামূলক কথা আমার সঙ্গে বলতে চাইতেন। সবসময় অন্তরঙ্গ কথা বলার প্রতি ওনার বিশেষ আগ্রহ থাকতো। আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে তিনি আমাকে প্রশ্ন করতেন। আমার পোশাক নিয়েও অযাচিত মন্তব্য করতেন। বলতেন, আমি কেন ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরি না। কেন বাংলাদেশের মেয়েদের পোশাক এত বাজে?’

অভিযোগপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন, নানারকম অশ্লীল কথাবার্তা তিনি গল্প আকারে বলতেন। যেমন কোনো সিনেমায় নায়ক নায়িকা কীভাবে অন্তরঙ্গ হলো, নায়ক নায়িকার সঙ্গে কী কী করল, এসব উনি খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে শোনাতেন এবং নানাভাবে বোঝাতেন যে উনি এইসব করতে চান। আমাকে বলতেন, ‘ধর না, আমরাও এমন করছি’। এসব ঘটনায় মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে তাকে সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি উল্লেখ করেন, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ শুরুতে যারা 'ভালনারেবল' মেয়ে, অর্থাৎ দেখতে সুন্দর, কিন্তু জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনিরাপত্তায় ভোগে বা দ্বিধান্বিত, তাদের টার্গেট করেন। এক পর্যায়ে নানান ছলছুতোয় তাদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে তোলেন এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। সুযোগ বুঝে বিয়ের প্রস্তাবও দেন। কিন্তু এটা শুধুই একটা ফাঁদ। কেননা উনি একজন অধ্যাপক, আর্থিক নিরাপত্তা অত্যন্ত সুদৃঢ়, দেখতে সুদর্শন; স্বাভাবিকভাবে মেয়েরা তার দিকে আকৃষ্ট হয়। এটাকে ব্যবহার করেই তিনি সবার সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলেন যেখান থেকে তিনি বাচিক ও মানসিকভাবে যৌনসুখ লাভ করতে পারবেন।

ভুক্তভোগী লেখেন, ‘ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের আড়ালে পুরো ব্যাপারটা তিনি এমনভাবে মঞ্চস্থ করেন, যেন তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না থাকে, তাকে দোষী বানানো না যায়। এটি প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষার্থীদের তিনি তার বাড়িতেও নিমন্ত্রণ জানান বলে দাবি করেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থী।

প্রসঙ্গত, এর আগেও ঢাবির দুই শিক্ষার্থী অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ এর বিরুদ্ধে যৌন ও মানসিক নিপীড়ন এর লিখিত অভিযোগ করেন। এক পর্যায়ে তার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বয়কট ও আন্দোলন করায় তাকে ৩ মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর