জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদ এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা ভেঙে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এঘটনার পর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের আগে অপরিকল্পিত সব নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের ব্যানারে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে রোববার (১০ মার্চ) দুপুর ১২টায় গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদ এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। এরপর মানববন্ধন শেষে দুপুর ২টায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণ না করে অপরিকল্পিত নতুন ভবন নির্মাণের পাঁয়তারার প্রতিবাদে দুই অনুষদের ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙে দেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় টেন্ডার সংক্রান্ত জটিলতায় অনেকদিন ধরে সম্প্রসারিত ভবনের কাজ শুরু করা যায়নি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, এখন খুব দ্রুত এই কাজ শেষ করার চেষ্টা করবো। ভবন না থাকার ফলে বর্তমানে ছোট কক্ষে ক্লাস নিতে হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত ল্যাবের সুবিধাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আশা করছি, আধুনিক ভবন নির্মিত হলে এতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে এবং শিক্ষা ও গবেষণা সুন্দরভাবে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ আহমদ প্রমুখ।
এর পর মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া দুই অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি জানিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙে দিয়ে ঘটনাস্থলে মানববন্ধন করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা ভিত্তিপ্রস্তরে ‘গাছ না কেটে নিজের হাত কাটুন’, ‘আগে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, পরে ভবন’, ‘গাছ কাটলে হাত ভাঙবো’ ইত্যাদি লিখে দেন।
এসময় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের নেতাকর্মীরা জানাযন, তাদের আন্দোলন ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে নয়। তারা অনেকদিন ধরেই মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্প্রতি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেই উদ্যোগ হঠাৎ স্তিমিত হয়ে গেছে। সে কারণে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ছাড়া গাছ কেটে আপাতত কোনো ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তারা।
'ভবন নির্মাণের বিরোধী আমরা নই' মন্তব্য করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, 'আমরা স্পষ্ট করে বলেছি! মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ভবন নির্মাণ করতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া আমরা একটি ভবনও হতে দেবো না। আগে মাস্টারপ্ল্যান পরে ভবন। এখানে প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ গাছ আছে। গাছ কেটে বিশ্ববিদ্যালয়কে মরুভূমি বানানোর পাঁয়তারা রুখে দেওয়া হবে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষার্থে মাস্টারপ্ল্যানের বিকল্প নেই'।
মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এ জায়গায় ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায় বলেন, 'আমরা শুরু থেকেই মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া যতগুলো ভবনই হয়েছে, তার অধিকাংশই অপূর্ণ। যেখানে-সেখানে এসব ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক সময় কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে'।
এদিকে, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আরো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জীববিজ্ঞান অনুষদ এবং গাণিতিক ও পদার্থ বিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ করা হবে। জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য ওয়াজেদ মিয়া গবেষণাগারের পশ্চিম পাশের জায়গা এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দক্ষিণ পাশের জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছে।