দেশে রফতানিযোগ্য ভোজ্য সরিষা তেল নিয়ে গবেষণায় সফলতার আলো দেখছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ড জামিলুর রহমান। ক্যানোলা গ্রেডের নতুন নিবন্ধিত সরিষার এই জাতটির নাম এসএইউ ক্যানোলা-১। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইরোসিক এসিডের পরিমাণ ১ শতাংশেরও নিচে থাকা জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
দেশের সরিষা ভোজ্যতেলে ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড (৪০-৫০ শতাংশ) বর্তমান থাকায় উন্নত দেশের বাজারে রফতানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। তবে ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেখা গেছে নতুন নিবন্ধিত এসএইউ ক্যানোলা-১ জাতটির ইরোসিক এসিডের পরিমাণ ০ দশমিক ৭ শতাংশ। পাশাপাশি জাতটিতে উচ্চ মাত্রার ওমেগা-৯ (৫১%), ওমেগা-৬ (৩১%) এবং ওমেগা-৩ (৭%) থাকায় এর সরিষার তেল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর ও উপকারী বলেছেন গবেষকগণ।
ড. জামিলুর রহমান ২০১৮ সাল থেকে ক্রুসিফেরি পরিবারের ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির ২৫টি জার্মপ্লাজম নিয়ে কাজ শুরু করেন। জুনসিয়া প্রজাতিটি টেট্রাপ্লয়েড। এ জাতের গাছগুলো ভিগোরিটি, প্রতিকূলতা সহিষ্ণুতা ও জীবনকাল অপেক্ষাকৃত বেশি। তবে গবেষক ড. জামিল নতুন এই জাতটির ইনব্রিডিং এবং রিকারেন্ট সিলেকশন, সেলফিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখেই জীবনকাল ১০৫ দিনে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। ফলে রফতানিযোগ্যতার পাশাপাশি দেশের কৃষির শস্য বিন্যাসেও অধিকতর উপযোগিতার সৃষ্টি করেছে জাতটি।
ইতোমধ্যে এসএইউ ক্যানোলা ১ এর ইশ্বরদী, পাবনা, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ, সিলেটে ট্রায়াল করে সফল হয়েছেন গবেষক ড. জামিলুর রহমান। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায় ফিল্ড ট্রায়ালে আছে ফসলটি। সেখানে দ্বায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, ১৩ শতাংশ জমিতে আমি এসএইউ ক্যানোলা-১ চাষ করার ব্যবস্থা করি। কিছুদিনের ভেতরেই আমরা হারভেস্ট করব। সরিষার দানার মান অনেক ভালো। এছাড়াও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করলে সাউ ক্যানোলা-১ চাষের পর কৃষক লেট বোরো ধানের চাষ করতে পারবে বলে আশা করছি।
এ জাতের গাছের উচ্চতা ১৬২-১৭৫ সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৪০-৪৫ দিনে ফুল এবং ১০৫ দিনে পর পরিপক্কতা লাভ করে। গাঢ় সবুজ ও কাটাযুক্ত অমসৃণ পাতার প্রতিটি গাছে শিটির সংখ্যা ৩০৫-৩৪০টি। হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৮ থেকে ২ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন হয়। এ জাতের সরিষার বীজে তেলের পরিমাণ ৩৮ শতাংশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়, সাতক্ষীরা জেলার নগরহাটে বিনা সরিষা-৭, বিনা সরিষা-৮, বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা ১৮ ও এসএইউ ক্যানোলা-১ জাতগুলোর তূলনামূলক চাষের ক্ষেত্রে প্রায় ১০৩ দিন জীবনকালে হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১২ টন ফলন দিয়েছে জাতটি।
ক্যানোলা গ্রেডের জাতটিতে বারি সরিষা ১৮ এর তুলনায় কম ইরোসিক এসিড থাকায় এর তেলের মান আরও ভালো হবে বলে আশা করছেন গবেষকগণ। এছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মত সরিষা তেলের মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রফতানি শিল্পেও বড় অবদান রাখবে বলে আশাবাদী তারা।