বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রবেশের প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার থেকে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ আন্দোলনের শুরুতে তারা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করলেও ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী দাবিগুলিতে ডিএসডব্লিউয়ের (ডিরেক্টরেট অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার) দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের পদত্যাগসহ বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে ছয় দফা দাবি পুনঃপ্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল ১১টায় বুয়েট শহীদমিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবির কথা তুলে ধরেন।
আন্দোলনের হালনাগাদ জানাতে এক লিখিত বক্তব্যে আন্দোলনকারীরা বলেন, আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত অনুপ্রবেশে নিরাপত্তার অভাববোধ করছি। এই মর্মে বুয়েট ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে বুয়েট প্রশাসনের কাছে শুক্রবার নিম্নোক্ত দাবিগুলি পেশ করেছিলাম। সেগুলোরই বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সবাইকে জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী আমাদের পরিবর্তিত দাবি ফের পেশ করছি-
১. গতকাল (শুক্রবার, ২৯ মার্চ) আমরা বুয়েটের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আমাদের আন্দোলনের প্রথম দাবি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বি, ‘বুয়েটে সকল রকম রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ এই নীতিমালা ভঙ্গ করার কারণে আমরা আজ (শনিবার, ৩০ মার্চ) সকাল ৯টার মধ্যে ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিলের দাবি জানিয়েছিলাম।
প্রশাসন কর্তৃক ইমতিয়াজ রাব্বির হল বহিষ্কার ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হলেও বুয়েট থেকে তার স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি। আমরা শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে লিখিতভাবে ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
২. এ ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল, তাদের একাংশের নাম পরিচয় আমরা ছবি এবং ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করেছি। তারা হলো- নেভাল আরকি এএসএম আনাস ফেরদৌস (ID: 1818004), মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল (ID: 2106101), অনিরুদ্ধ মজুমদার (ID: 2106079), জাহিরুল ইসলাম ইমন (ID: 2112031) এবং সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাত (ID: 2106126)।
ইমতিয়াজ রাব্বির মতোই বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করায় এদের সকলের বুয়েট থেকে স্থায়ী একাডেমিক এবং হল থেকেও বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।
৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এবং এদের বাইরে বাকি আরো যারা জড়িত ছিল, যাদের আমরা শনাক্ত করতে পারিনি, তাদের সকলকেই যেন বুয়েট প্রশাসন অনতিবিলম্বে শনাক্ত করে এবং ওপরে উল্লিখিত অভিযুক্তদের মতোই একই মেয়াদে শাস্তির ব্যবস্থা করে।
তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলো, এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা শুক্রবারই আমরা প্রশাসনের কাছে চেয়েছিলাম। তার প্রেক্ষিতে আমাদের মাননীয় উপাচার্য আমাদের মৌখিক ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরা এই মুহূর্তে এই দাবিটির বিষয়ে বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত নোটিশ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
৪. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য রাত সাড়ে ১০টার পর সকল ছাত্রছাত্রীর ক্যাম্পাসে থাকা নিষেধ এবং যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের রাত সাড়ে ১০টার বেশি সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হলে সেক্ষেত্রে ডিএসডব্লিউ স্যারের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।
(ক) এক্ষেত্রে যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেওয়া নাই হয়ে থাকে, তাহলে DSW স্যারের প্রটোকল ভেঙে বহিরাগতরা মধ্যরাতে সেমিনার রুমে মিটিং করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে DSW স্যার নিজের প্রটোকল অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ।
(খ) আর যদি বহিরাগতদের পারমিশন (অনুমতি) দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অফিসের প্রটোকল- ১১ অক্টোবর, ২০১৯-এ দেওয়া ঘোষণা ‘বুয়েটে সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ’, এর লঙ্ঘন করেছেন DSW স্যার।
(গ) ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম, সেমিনার রুম, ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন জায়গার ব্যবহার ডিএসডব্লিউয়ের আওতাধীন। তিনি বলেছেন, এ জায়গাগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি অনুমতি দেননি। এক্ষেত্রে তার অনুমতি ব্যতিরেকে বহিরাগতদের এ জায়গাগুলো ব্যবহার করার মতো ধৃষ্টতামূলক আচরণ DSW-এর দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এমন ডিএসডব্লিউয়ের দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ চাই আমরা।
৫. বুয়েট ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ করায় আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে শনিবারের (৩০ মার্চ) টার্ম ফাইনাল আমরা বর্জন করছি এবং আগামীকাল (রোববার) ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, গতকাল (শুক্রবার) আমাদের আন্দোলনের পর তথাকথিত রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু ব্যক্তিবর্গ ফেসবুকে পোস্ট করে আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপপ্রচার চালান। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
আমরা সবসময়ই বুয়েটের সংবিধানে থাকা ‘বুয়েটে সকল রকম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সংঘবদ্ধ এবং যেকোনো মূল্যে বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির হাত থেকে মুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর।
আমরা আবারও সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের এসকল দাবি কেবলমাত্র কোনো বিশেষ ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুয়েটের সংবিধান অনুযায়ী সকল রকম ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছি।
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এএসএম আনাস ফেরদৌস, ইলেক্ট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল, অনিরুদ্ধ মজুমদার, সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাত, নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং জাহিরুল ইসলাম ইমন।