অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নিজ দলের এক কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী হলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কামাল মোহাম্মদ মোস্তফা।
শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে মারধরের বিষয়টি তুলে ধরেন ভুক্তভোগী কামাল । পোস্টে অভিযুক্ত তিনজনের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন তিনি। তবে ঘটনাটি ঘটে গত বছরের আগস্ট মাসে।
অভিযুক্তরা হলেন- সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের মাহফুজ আনাম ফারুক, ইতিহাস বিভাগের আরিফ রাসেল, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জোবায়ের আহমেদ। তারা সকলেই ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন গ্রুপের অনুসারী।
ভুক্তভোগী কামাল মোহাম্মদ মোস্তফা তার পোস্টে উল্লেখ করেন, খেলাধুলা নিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাকে সরি বলার জন্য সেদিন সারাদিন চাপ দিতে থাকে, আমি পরবর্তীতে সরি বলতে রাজি হই। পরে কয়েকজন কালো কাপড়ে চোখ মুখ বেঁধে রাত ৩টার দিকে শাহজালাল হলের টিভি রুমের কাছে নিয়ে পিছন থেকে সজোরে লাথি মেরে রুমে ঢুকায়। মাহফুজ আনাম ফারুক রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আর পিছন থেকে জোবায়ের আমাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে থাকে যেন নড়াচড়া করতে না পারি। টানা ৪০-৫০ মিনিট মারধর করার পর ওরা একটা ব্রেক নেয়... তারপর বিভিন্ন পলিটিক্যাল ইকুয়েশন নিয়ে কথাবার্তা বলে। আমি অর্ধমৃত অবস্থায় ওদের জিজ্ঞেস করি আমার অপরাধ কি । আরিফ রাসেল জবাব দেয়, " তোর কোনো অপরাধ নাই... তোর অভার পলিটিক্যাল এক্টিভিটিজ আমাদের পছন্দ না এজন্যই তোর সাথে এসব হচ্ছে। তোর আব্বু ইকবাল হোসেন টিপু (বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক) রাজু মুন্সি, রায়ান আলম কে কল দে, দেখি তোর বাপেরা তোরে বাঁচাতে পারে কিনা। আমি জবাব দিলাম কাওরে লাগব না, জাস্ট হাত আর চোখের বাঁধনটা খুলে দে, তারপর ওয়ান ভার্সেস ওয়ান খেলব। বলার সাথে সাথে মাহফুজ, আনাম, ফারুক রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এরপর কি হয়েছে আমি আর বলতে পারিনা।
সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে কামাল মোহাম্মদ মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে তিনি জানান, আমি ওদের ধারার রাজনীতি করতাম না এজন্য হয়তো ওদের কাছে আমি রিস্কি ছিলাম। তাই ওরা পথের কাঁটা সরাতে চেয়েছে। এজন্য তাদের একটা ইস্যু দরকার ছিল। তাই খেলাধুলার ইস্যু নিয়ে আমাকে টিভি রুমে ডেকে নিয়ে মারধর করেছে। এ সময় ১৫-২০ জনের মতো আমাকে মারধর করে এদের মধ্যে তিনজনকে আমি চিনতে পারি।
অভিযুক্ত জোবায়ের আহমেদের কাছে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে অভিযোগ করছে সে আমাদের হলের ছোট ভাই। আর এমন একটা ভুল অভিযোগ দিছে যে আমি নাকি ওকে পিছন থেকে বেঁধে রেখেছিলাম। এটা পুরোপুরি ভুল কথা।
আমি ওকে কোন টাচ করি নাই। তবে এটা সত্যি যে পলিটিক্যাল কিছু ছেলেপেলে ওকে চড় থাপ্পড় দিছে। কিন্তু কেউ ওকে এক্সট্রিম লেভেলের কিছু করে নাই । আর কেউ কখনো কি নিজের বগির ছেলেকে রামদা দিয়ে কোপায়? এ ধরনের অভিযোগ আনার জন্য কেউ ওকে উস্কায় দিচ্ছে।
আরও দুই অভিযুক্ত মাহফুজ আনাম ফারুক ও আরিফ রাসেলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া মেলেনি।
শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা সাইদুল ইসলাম সাঈদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দীর্ঘদিন আগের কথা। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ছিল। যদি সত্যিকার অর্থে কোন কিছু ঘটে থাকত তাহলে সেটা দেখার বিষয় ছিল তৎকালীন কমিটির। বিষয়টি এতদিন সামনে আসেনি তার মানে এর পেছনে নিশ্চয়ই কেউ ইন্ধন যোগাচ্ছে। তবে কামাল যেভাবে বিষয়টিকে প্রচার করেছেন আসলে বিষয়টি ওরকম কিছু হয়নি। তবে আমরা এটা নিয়ে জানার চেষ্টা করছি।
তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই ব্যাপারে অবগত নই। এখন যারা দায়িত্বে আছে তারা বলতে পারবে। তবে আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।