লাল সোনাইলের অপার সৌন্দর্যে সেজেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। বাহারি ফুলে প্রকৃতির এই সুন্দর সাজে ৭৫ একরের পুরো ক্যাম্পাস যেন সেজেছে নতুন রূপে।
দুর্লভ লাল সোনাইল বেরোবির বুকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে প্রেম নিবেদন করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের সাথে। রোমাঞ্চকর প্রেমালাপ যেন উপযুক্ত হয়ে ওঠেছে লাল সোনাইলের বাহারে। প্রিয় মানুষের খোঁপায় গুঁজে দেওয়ার এক অনন্ত প্রয়াস যেমন কবি কাজী নজরুল চেয়েছিলেন— ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল’; বেরোবিতেও যেন একই পরিবেশ! পাতার আড়ালে থোকা থোকা লাল সোনাইল ফুল দেখে প্রকৃতি প্রেমীদের মনে প্রেম উদিত হচ্ছে। এই সৌন্দর্য পৃথিবীর অমৃত লহরীর মতো যে ব্যাখ্যার অন্তহীন।
ক্যাম্পাসের অস্থায়ী শহিদ মিনারের পাশে থোকায় থোকায় দুলছে লালচে গোলাপি ও সাদার সংমিশ্রণ যুক্ত লাল সোনাইল ফুল। ক্যাম্পাসের ভিসি রোডের পাশের প্রতি সোনালু গাছের গা থেকে যেন সবুজ জোড়া পাতার পাহাড়ে গোলাপি ঝরনা নেমে এসেছে। বাতাসে কিশোরীর কানের দুলের মতো দুলতে থাকা এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য চোখে পড়ে। মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
আবু সাইফ ও জোনায়েদ নামের দুই দর্শনার্থী বলেন, প্রায়ই শান্তির নিঃশ্বাস নিতে আসি বেরোবিতে। কৃষ্ণচূড়া, লাল সোনাইলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। চারদিকে সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মন ভরে যায়। বছরের সবসময় সবুজে ভরা থাকে, তবে এখন ফুলে-ফুলে ভরে আছে, খুব ভালো লাগছে।
বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। শাড়ি পরে নিজেকে প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হচ্ছেন দর্শনার্থীদের অনেকেই।
শাড়ি পরে খোঁপায় ফুল গুঁজে ছবি তুলছেন দর্শনার্থী অনামিকা। মুখে এক ঝিলিক হাসি নিয়ে বলেন, লাল সোনাইল আর কৃষ্ণচূড়ার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। লাল সোনাইলের এই সৌন্দর্যে নিজেকে ফ্রেমে বন্দি করে রাখছি। এই অনুভূতি বোঝানোর মত না।
লাল সোনাইলের সৌন্দর্য নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ২০০৮ সালে কোনো গাছ ছিল না। এমনকি ২০১৪ সালেও ক্যাম্পাস ছিল ছায়াহীন। শিক্ষার্থী আর কয়েকজন কর্মচারীকে সাথে নিয়ে চার শতাধিক প্রজাতির প্রায় ৩৭ হাজার গাছ রোপণ করেছি। এখন সারা বছর বিচিত্র ফুল আর সবুজের আচ্ছাদনে অপরূপ সাজে সৌন্দর্য বিতরণ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে স্বর্ণচাঁপা, কনকচাঁপা, লাল সোনাইল, বন আশরা, বান্দরহুলা, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, জারুল, কুর্চিসহ অনেক ফুল ফুটেছে।
তিনি বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহ ক্যাম্পাস যেমন শীতল, তেমনি এর নান্দনিকতা মানুষকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করছে। তাই ক্যাম্পাসের বাইরেরও অনেকে আসছে শীতলতা আর নানন্দিকতা উপভোগ করতে।
লাল সোনানাইলের দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা মুগ্ধ করে তোলে শিক্ষার্থীদের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি যেন লাল সোনাইলের নৈসর্গিক লীলাভূমি বেরোবি৷