সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ধার ধারে না জাবি প্রশাসন

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রুদ্র আজাদ, জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 19:59:02

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) পরিচালনায় প্রধান নিবার্হী পরিষদ সিন্ডিকেট সভায় পাস হওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তোয়াক্কা না করা ও অফিস আদেশ জারিতে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। প্রজ্ঞাপন জারিতে বিলম্বের কারণে সিন্ডিকেটে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সময়মতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এক্সপেনসিভ এবং ননএক্সপেনসিভ এলাকা হিসেবে ভাগ করেছে সরকার। এক্সপেনসিভ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা হিসেবে পাবেন আর আর ননএক্সপেনসিভ এলাকার জন্য পাবেন ৩৫ শতাংশ হারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাখা হয় ননএক্সপেনসিভ ক্যাটাগরিতে। ফলে এখানকার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া পাওয়ার কথা থাকলেও এতোদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তুকি দিয়ে ৫০ শতাংশই দিয়ে আসছিল।

এক্সপেনসিভ এলাকার অন্তর্ভুক্ত করতে মঞ্জুরি কমিশনের সাথে দেন-দরবার করে ব্যর্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই গত ৭ নভেম্বর সিন্ডিকেটের ৩০৩তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ভর্তুকি না দিয়ে সরকার নির্ধারিত হারেই বাড়ি ভাড়া দেওয়ার।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ উক্ত অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেন ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখে। কিন্তু ৭ নভেম্বরে সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ হয় জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখে। অর্থাৎ সিন্ডিকেটে পাশ হওয়া সিদ্ধান্ত প্রকাশে সময় লাগে ৭৫ দিন।

তবে এখনো পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসেও ৫০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বাজেটে এ টাকা না থাকায় লাখ লাখ টাকা ঘাটতি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল এলাকায় বহিরাগত যুগলকে মারধর ও ছিনতাইয়ের এক ঘটনায় বাধা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিক ও তার বান্ধবীকে মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।

পরবর্তীতে ৩১ অক্টোবর ডিসিপ্লিন বোর্ডের সুপারিশে ৭ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় চার ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের নোটিশ জারি করতে গড়িমসি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ৭ নভেম্বরের সিন্ডিকেটের বহিষ্কারের আদেশ প্রকাশ করে ২৬ নভেম্বর।

৭ নভেম্বরের সিন্ডেকেটে অন্য তিন শিক্ষার্থীকে ছিনতাইয়ের দায়ে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায়ও বহিষ্কারাদেশ জারি হয় দীর্ঘ একমাস পর।

গত ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেগুলোর অফিস আদেশ জারি হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্বচ্ছতা থাকলে কোনো সিদ্ধান্তের এত দেরি হওয়ার কথা না। তার পরেও যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেরি করে থাকে তবে তার পিছনে নিশ্চয় অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে।’

‘রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমনটা করে থাকে। সিন্ডিকেটে যে সিদ্ধান্ত পাশ হয়, সেটা একটা পাবলিক তথ্য। কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত গোপন করতে পারে না, আর দেরি করার প্রশ্নই আসে না।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক রাশেদা আখতার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিশ্বদ্যিালয়ের সিন্ডিকেট সভার কোনো সিদ্ধান্ত প্রকাশ হতে এত সময় লাগার কথা না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এভাবে দেরি করা ঠিক নয়।'

এ ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর