সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ফের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ-মিছিল বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের (ডেইরি গেইট) সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
অবরোধকালে শিক্ষার্থীদের ‘সারাবাংলা খবর দে, কোটা প্রথা কবর দে; কোটা প্রথা বাতিল চাই মেধা ছাড়া চাকরি নাই; নিপাত যাক, নিপাত যাক, কোটা প্রথা নিপাত যাক; বৈষম্যের ঠাই নাই লাখো শহীদের বাংলায়; মেধা নাকি কোটা? মেধা, মেধা; জেগেছে রে জেগেছে, জাবি জেগেছে-লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে; মেধাবীদের কান্না আর না, আর না’ ইত্যাদি কোটাবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শুরুতে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ১ ঘণ্টা অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হলেও যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে প্রায় ৩০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে শতশত যানবাহন আটকে থাকতে দেখা যায়।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, যেহেতু হাইকোর্ট কোটা নিয়ে শুনানির পূর্বঘোষিত তারিখ পিছিয়েছে সেহেতু আমরা এখনো বিশ্বাস করি এই অন্যায্য কোটা বাতিল হবে এবং রায়টি আমাদের পক্ষে যাবে। তাই আমরা এই মুহূর্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচির দিকে যাচ্ছি না। জনভোগান্তি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক কিছু সময়ের জন্য অবরোধ করে রেখেছি। আমাদের আন্দোলন জারি রাখার জন্য আজকের এই অবরোধ কর্মসূচি।
দাবি মেনে নেওয়া না পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আজ ৪ জুলাই কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি ছিল সেটা পিছানো হয়েছে। আমাদের যৌক্তিক দাবি সময়ক্ষেপণ করে আন্দোলন বানচাল করা যাবে না। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে, যোগ্যতার ভিত্তিতে সবার সরকারি চাকরি হোক সেই দাবিতেই আমাদের আন্দোলন।
পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, আদালত যেহেতু সময় বাড়িয়েছে তাই আমরা এখনো অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবরোধে যাব না। স্বল্প সময়ের জন্য অবরোধ করবো। জনগণের জানমালের যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা অবস্থান কর্মসূচী করব।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমরা তাদেরকে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কথা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ মর্মে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ওইদিন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন ঠিক করে দেন তিনি৷