রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেনকে দলাল, চাটুকার, তেলবাজ ও দূর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে চাকরিচ্যুত ও অপসারণের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন শিক্ষর্থীরা।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় চারুকলা প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা ও বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিতভাবে এ দাবি জানান এবং প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন তারা।
অভিযোগপত্রে উল্লিখিত বিষয়ের কাতিপয়:
১. তিনি শিক্ষাজীবন থেকে শ্রেণিকোর্সের কাজ না জেনে অন্যের শ্রেণিকাজ চুরি করে স্নাতক-স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণি পান।
২. চারুকলার প্রতিটি বিষয় ব্যবহারিক সম্পর্কিত হওয়া সত্ত্বেও ড. সুজন সেনের কর্মজীবনের পুরো সময়ে কোনো শিক্ষার্থী তাকে সরাসরি শ্রেণির ব্যবহারিক বিষয় হাতেনাতে শিখিয়ে দিতে দেখেননি।
৩. কিছু না শিখিয়ে তিনি জোরপূর্বক তথা স্বেচ্ছাচারী আচরণের মাধ্যমে কোর্সের কাজ আদায় করে মনগড়া মার্কিং করেন। এক্ষেত্রে পছন্দের শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক বেশি নম্বর দেন, কিন্তু অন্যরা কেন কম নম্বর পায় সেটার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা তিনি দেন না।
৪. বিভাগের অন্য শিক্ষকের সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থীর সুসম্পর্ক থাকলে কিংবা নিজের মতাদর্শের বাহিরের কোনো শিক্ষার্থী থাকলে তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে নম্বর কম দেন।
৪. পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট সময়ে খাতা না দিয়ে সময় শেষ হওয়ার পূর্বে নিজের খেয়ালখুশী মতো খাতা নিয়ে নেন।
৫. পছন্দের শিক্ষার্থী বড় অপরাধ করেও কৌশলে বাঁচিয়ে দেওয়া এবং পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র এবং লুজশিট সরবরাহেরও অভিযোগ রয়েছে ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে।
৬. কোনো শিক্ষার্থীর শিল্পকর্ম পছন্দ হলে তা নিয়ে নেন, কখনও ফেরত দেন না। সেসকল কাজ তিনি নিজের নামে পরবর্তীতে চালিয়ে দেন।
৭. চলতি বছরে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফিল্ড স্টাডিতে যান তিনি। সাজেক, সেন্টমার্টিন এবং কক্সবাজারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি ০২ ফেব্রুয়ারি থেকে ০৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান করেন। ছুটিও নেন সেই তারিখের সঙ্গে মিল রেখে। তবে টিএ/ডিএ’র জন্য তিনি ০৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারির ভুয়া তারিখ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সম্প্রতি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষাসফরেও যান তিনি। একদিনের শিক্ষাসফরে গিয়ে তিনি আটদিনের ছুটি নিয়ে অতিরিক্ত/টিএডিএ তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন।
৯. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বশরীরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপরীতে অবস্থান নেন তিনি।
১০. বিভাগের পাশাপাশি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের তিনবছর মেয়াদে (এপ্রিল ২০২১- এপ্রিল ২০২৪) প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালে নাস্তা, খাবার, ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি, তৈজসপত্রসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয়ের শতকরা ৮০ ভাগ ভাউচারেই তার জালিয়াতি রয়েছে।
১১. হল ফান্ডের টাকা থেকে তিনি চকলেট (সংযুক্তি-০৯) থেকে শুরু করে ওডোনিল, হারপিক, এয়্যার ফ্রেশনার, অ্যারোসোল, ডেম ফিক্স ক্রয় করে নিজের বাসার জন্য ব্যবহার করতেন।
১২. ৮ হাজার ৮০০ টাকার একটি ব্যক্তিগত ভাউচারে ফ্লুইড দিয়ে ঠিকানা পরিবর্তন করে হলের বলে ইন্টারনেট তহবিল থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হলের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা বলেন ড. সুজন সেন কখনই দায়িত্বশীল আচরণ করেননি। নিজ স্বার্থ হাসিলে তিনি সর্বদা পক্ষপাতমূলক আচরণ করতেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. সুজন সেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. বনি আদম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দেওয়া অনুলিপি পেয়েছি। আগামীকাল বিভাগের শিক্ষকরা বসে সিন্ধান্ত নিবো। অধিকাংশ শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।