পাবিপ্রবি’র প্রো-ভিসির দিনভর পদত্যাগের নাটক!

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,পাবনা, বার্তা২৪ | 2023-08-29 09:59:40

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (উপ-উপাচার্য) প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলামের দিনভর পদত্যাগের নাটক হয়ে উঠেছে টক অব দ্য টাউন।

পাবিপ্রবি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টার দিকে পদত্যাগের আবেদন করলেও বিকেলে সেই পদত্যাগ পত্রটি তিনি প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। এ নিয়ে চলছে পাবনায় বিভিন্ন মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনাকে ইস্যু করে তিনি এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে প্রো-ভিসি ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর স্যার সকালে এক সিদ্ধান্ত নেন, বিকেলে তিনি আবার সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে দেন। বর্তমানে পাবিপ্রবিতে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এমতাবস্থায় তার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলেও দাবি করেন তিনি।’

প্রো-ভিসি আরও বলেন, সম্প্রতি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় শহরের রাধানগর মহল্লার একটি ছাত্রীনিবাসে ঢুকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় বখাটে। এ সময় ওই বখাটে ছাত্রীকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা বিক্ষোভ করেন এবং সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দাবি জানান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগও দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর স্যার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে গত দশ মাসে সুষ্ঠু পরিবেশে একাধারে এক সপ্তাহও বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারেন নাই। তার ব্যর্থতার দায়ভার আমি নেব কেন? প্রতিনিয়ত একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝামেলা লেগেই থাকে। ইতোপূর্বে জরুরি রিজেন্ট বোর্ডের সভা করে ১০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের পর তা ২০ দিনের মাথায় আবারও বোর্ড সভা করে তা প্রত্যাহার করে নেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চেইন অব কমান্ড একেবারে ভেঙে পরে। ডেপুটি রেজিষ্ট্রার প্রো-ভিসির আদেশ-নির্দেশ অমান্য করে, তাই আমি মনে করি এখানে একদমই কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।’

এদিকে ডেপুটি রেজিষ্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, শুনেছি প্রোভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম পদত্যাগ চেয়ে একটি আবেদন সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিয়েছেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের আদেশ নির্দেশ অমান্য করেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ক্ষমতা নেই। এখানে ভাইস-চ্যান্সেলর স্যার সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তার বাইরে আমি যেতে পারি না।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রো-ভিসি স্যারের যাওয়ার জায়গা আছে বলেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের অন্য কোথাও সুযোগ থাকলে আমি নিজেও এখানে থাকতাম না। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করার কারণে নির্বাচন স্থগিত করে রেখেছেন নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই করুণ।’

রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. আব্দুল আলীম সাংবাদিকদের বলেন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানাবিধ অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর স্যারের পদত্যাগ এরই সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. রোস্তম আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সম্প্রতি একটি বিষয় নিয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম’র সাথে একটু ঝামেলা হয়েছে, এটি বসেই সমাধান করা যেত। আমি তাকে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য বলেছি। এটি পদত্যাগ করার মতো কিছু নয়।’

এদিকে বিকেলে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেনি। তাদের বিশেষ অনুরোধে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ৪ বছরের জন্য ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর পাবিপ্রবিতে প্রো-ভিসি হিসেবে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো অধিকাংশ এবং শিক্ষকদের অধিকাংশ পাবনার স্থায়ী হওয়ায় একে অপরের মধ্যে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে একের পর এক অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-শিক্ষকরা ইতোমধ্যে একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানসহ প্রশাসনিক সকল কাজে সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন পাবনার সচেতন সমাজ।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর