সমন্বিত কৃষি ভর্তি প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিগত সময়ে চালু থাকা কোটা পদ্ধতি বহাল রেখেই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিদ্যামান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি থাকলেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে নিজস্ব সিন্ডিকেট মিটিং এ ইউজিসির অনুমোদন সাপেক্ষে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে
জানিয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ল গুলোর সমন্বিত ভর্তি কমিটি।
জানা যায়, গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনির কোটাসহ বিভিন্ন ধরনের কোটা পদ্ধতি কার্যকর রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত পোষ্য কোটাও কার্যকর রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যতিত কার্যকর থাকা অন্যান্য কোটাগুলো হলো ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটা, উপজাতি বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা,হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং খেলোয়াড় কোটা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির পূর্বের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কোটা থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলেই মেলে ভর্তির সুযোগ।
কোটার পদ্ধতি এবং এর সংখ্যার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সূত্র থেকে জানা যায়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ক মোট ৪৪৮ টি আসনের বিপরীতে ১৯টি মুক্তিযুদ্ধা কোটা, ১০টি পোষ্য কোটাসহ মোট ৬৮টি কোটা কার্যকর রয়েছে। যা মোট আসনের ১৫ শতাংশের বেশি। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে মোট ৬৯৮টি আসনের বিপরীতে ৩২টি মুক্তিযুদ্ধা ,২০টি পোষ্য কোটাসহ মোট ৭৮টি কোটা কার্যকর রয়েছে। যা মোট আসনের ১১ শতাংশ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১১৬টি আসনের বিপরীতে ৫৫টি মুক্তিযুদ্ধ এবং ৬টি আদিবাসী কোটা বিদ্যামান রয়েছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪৩১টি আসনের বিপরীতে ২০টি মুক্তিযুদ্ধা কোটা সহ মোট ৩৮টি কোটা কার্যকর রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪৩৫টি আসনের বিপরীতে ১৯টি মুক্তিযুদ্ধা এবং ১২টি উপজাতি কোটা কার্যকর রয়েছে। অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও বিদ্যামান রয়েছে কোটা পদ্ধতি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কার্যকর থাকা কোটার বিষয়ে অভিযোগ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক বলেন, বর্তমানে আমরা দেখছি কীভাবে জালিয়াতি করে মুক্তিযুদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছিল ক্ষমতাশীলরা। যেখানে আসল মুক্তিযোদ্ধারাই সঠিক পদ্ধতিতে নির্ধারিত নয় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এত বেশি সংখ্যক মুক্তিযুদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য কোটা থাকার যৌক্তিকতা নিশ্চিতরুপেই প্রশ্নবিদ্ধ।
কৃষি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ইকরামুল ইসলাম বলেন, ৬৯.৫০ মার্কধারী শিক্ষার্থী সর্বশেষ মেধাতালিকায় স্থান পেলেও কোটাধারীরা নির্ধারিত এই মার্কের কম পেয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এত জীবন উৎসর্গ হওয়ার পরেও কীভাবে এই বৈষম্য বিদ্যামান থাকে।মেধাই হওয়া উচিত নতুন বাংলাদেশের যোগ্যতা যাচাই এর একমাত্র মানদণ্ড।
সমন্বিত কৃষি ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফর রাহমান এবিষয়ে বলেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে গুচ্ছের সমন্বিত সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে এই কাঠামোর পরির্বতন কিংবা সংশোধন এই কমিটির এজেন্ডাভুক্ত নয় এবং ক্ষমতার বাইরে। এজন্য শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পূর্বে প্রকাশিত সার্কুলার অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে পরবর্তীতে নিজস্ব সিন্ডিকেট মিটিং এ ইউজিসির অনুমোদন সাপেক্ষে কোটা পদ্ধতির সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।
মূলত, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা-সংক্রান্ত ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে ভর্তির বিষয়ে কোটা-সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার স্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই। তবে ভর্তির বিষয়ে কমিটিকে ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভর্তি কার্যক্রম অধ্যাদেশের ৪৬ ধারা অনুযায়ী ভর্তি কমিটি দ্বারা নির্ধারিত কার্যপ্রণালি অনুসরণ করতে হবে। ধারণা করা হয়, এ ধারাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েই ভর্তি পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়।