কোথাও গ্রিল নেই, কোথাও নেই দেয়ালের অর্ধেক। আবার কোথাও ধ্বসে পড়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রাচীর। দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন আর অবহেলার ফলাফল এই জরা-জীর্ণ অবস্থা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ১৭৫ একরের সীমানা প্রাচীর জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে আছে বহুদিন ধরেই। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করছেন এখানকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তাকর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী প্রাচীরের গ্রিল নেই অনেকাংশেই এবং অধিকাংশ দেয়ালই ভেঙে পড়েছে। ফলে আশেপাশের স্থানীয় লোকজন প্রাচীরের ভাঙা অংশ দিয়ে অবাধে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করছেন হরহামেশা।
এছাড়াও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকের পাশে দেয়াল বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ভাঙা জায়গা। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেটের একপাশে প্রাচীরের একটা বড় অংশ ধসে পড়ে রয়েছে। তা দিয়ে যে কেউ চাইলেই প্রবেশদ্বার ব্যবহার না করে নির্বিঘ্নে বিচরণ করতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের আশেপাশে যেসব কৃষি জমি রয়েছে সেখানে স্থানীয় লোকেরা ইবি লেক সংলগ্ন প্রাচীরের ভাঙা অংশ দিয়ে কোনো প্রকার বাঁধা ছাড়াই নিয়মিত চলাফেরা করছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই এসকল এলাকাকে নিজেদের জন্য অনিরাপদ বলে অভিযোগ করেছেন। বিশেষত নারী শিক্ষার্থীরা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের বেহাল অবস্থার কারণে এর আগেও বেশ কয়েকবার শিক্ষকদের আবাসস্থল ডরমেটরিতে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে। বিভিন্ন সময় ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের পাশের ভাঙা অংশ দিয়ে চোর অনুপ্রবেশ করে শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে চুরি করার ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। তাছাড়া বন্ধের মাঝে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে চুরির ঘটনাও নতুন কিছু নয়।
বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তারা জানান, এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়াও অবাধে বহিরাগতরা চলাফেরা করে, যা আমাদের নিজেদের কাছে বিরক্তিকর লাগে। তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে যেন এসবের দ্রুত সমাধান দেয় এবং ক্যাম্পাস জুড়ে নিরাপত্তা আরও জোরদার করে।
এ বিষয়ে দায়িত্বরত আনসার সদস্য জানান, আমরা গেটে প্রবেশের বিষয়টি দেখতে পারি। তবে প্রাচীরের ভাঙা অংশ দিয়ে কখন কীভাবে কে প্রবেশ করে সেটা আমাদের সবসময় নজর রাখতে কষ্ট হয়ে যায়। আমরা চাই প্রশাসন এ বিষয়ে নজর দিয়ে যেন দ্রুত এর সমাধান দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ভিজিট করতে গিয়ে ভাইস চ্যান্সেলর স্যারসহ সবাই বিষয়গুলো দেখেছি। উপাচার্য স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন দ্রুত এখানে আর গ্রিল নয়, ওয়াল করতে হবে। যেহেতু ওয়াল ভাঙা তাই ওখানে নিরাপত্তার স্বার্থে আনসার সদস্য বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, লেক এবং হলের পাশের ওয়াল ধসে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমি অবগত নই। আমি এখনই ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে কথা বলে বিষয়টি দেখছি এবং যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান করা হবে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের প্রাচীরগুলো আরো উঁচু করা হবে এবং নিরাপত্তার জন্য ওয়ালের ঘেঁষে রাস্তা করা হবে যেন সর্বক্ষণ টহল দেয়া যায়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ.কে.এম শরীফ উদ্দীন জানান, আমরা প্রাচীরের বিষয়ে অবগত হয়েছি এবং একটা বাজেট চেয়েছি প্রশাসনের কাছে। অ্যাপ্রুভাল পেয়ে গেলে আমরা ইট দিয়ে গেঁথে দিবো। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু হলের পাশে ওয়াল ধসে পড়েছে, সেখানে মাটি ভরাট করে আবার ওয়াল তৈরি করা হবে।