রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রতিবছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও কমে যাচ্ছে বাসের সংখ্যা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। যার বিপরীতে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস আছে মাত্র ৫টি। যার ফলে বাধ্য হয়েই অটো কিংবা লোকাল বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে করে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সপ্তাহে পাঁচ দিন পাঁচটি রুটে নিয়মিত যাতায়াত করার কথা থাকলেও বাস সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় হতে তাজহাট-শাপলা চত্বরের রুটটি (রুট নং-১) বন্ধ আছে প্রায় আড়াই বছরেরও বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদে শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে আট হাজার কিন্তু তাদের জন্য হল রয়েছে তিনটি। যার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী থাকেন মেস কিংবা বাসা বাড়িতে। ক্লাস করতে যাওয়ার সময় তারা বাসে ঠিক মত জায়গা পান না। যার ফলে অনেকেই অটো বা রিকশার উপর নির্ভর করতে হয়। এছাড়াও অনেকের টিউশনি শহর কেন্দ্রিক হওয়ায় তারাও বাসের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাসের সংকটের ফলে তাদেরও অনেককে সিট না পেয়ে অটো কিংবা রিকশায় চলাচল করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস প্রায় চার বছর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, যার মধ্যে একটি বাস অনৈতিকভাবে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি একটি বাস মেরামতের জন্য কমিটি প্রণয়ন করেছে পরিবহন পুল। অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা মৌখিকভাবে একটি বাস দেওয়ার কথা বললেও লিখিতভাবে তার কোন নিশ্চিতকরণ মেলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তালেব ইসলাম বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত কিন্তু আমরা দেখছি দিনে দিনে বাসের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমি নিজে টিউশন এবং শহরের বিভিন্ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু প্রায়ই বিকালের বাসগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকার মতোও জায়গা পাই না, বিশেষ করে মেডিকেল মোড় রুটের বাসগুলোতে এই সমস্যা বেশি হয়। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আল হুমাইরা জান্নাতি ঐশি বলেন, বাসে চলাচল করতে গেলে প্রায়ই ভিড়ের ভিতর গাদাগাদি করে যেতে হয়। যেটা মূলত আমাদের মেয়েদের জন্য একটু বেশিই কষ্টকর। আমরা শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশন পড়িয়ে থাকি আর আমাদের টিউশন বেশির ভাগই শহরকেন্দ্রিক হয়। যদি আমরা অটো কিংবা লোকাল বাসের মাধ্যমে যাতায়াত করি তাহলে মাসে আমাদের অনেকগুলো টাকা ভাড়ায় চলে যায়। এই সমস্যা দ্রুত নিরসন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আবার দেখা যায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শনিবারে বাস চললেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বন্ধ থাকে।
পরিবহন পুলের পরিচালক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ রানা বলেন, আমাদের পরিবহন পুলের গাড়ি সংকট আছে। তাছাড়াও যে গাড়িগুলো আমাদের পরিবহন চলে আসে প্রত্যেকটির অবস্থা খুবই করুণ। দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের কোনো না কোনো গাড়ি মেরামত করতে হচ্ছে। এমনও দিন রয়েছে যেদিন দুটি গাড়ি একসাথে নষ্ট হওয়ার কারণে আমাদের কর্মচারীদের বাস শিক্ষার্থীদের রুটে চালাতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন বাস যেন আমাদের পরিবহন পুলে সংযুক্ত হয় সেজন্য আমরা কিছু উদ্যোগও গ্রহণ করেছি। আমরা পাঁচটি ব্যাংকে ৫২ সিটের বাসের জন্য আবেদন করেছি এবং তাদের কেউ কেউ আমাদের বাস দেবার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন, যেহেতু ব্যাংক এতগুলো টাকার বাস দিবে তাই অনেক প্রসিডিউর ফলো করতে হয়, সে ক্ষেত্রে কিছুটা সময় প্রয়োজন। আবার আমরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দুইটি দোতলা বিআরটিসি বাসের জন্য আবেদনও করেছি। আমাদের ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে নিজের হাতে আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন। আশা করছি এখান থেকেও হয়তো আমরা পজিটিভ ফিডব্যাক পাব।