কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আশেপাশে অনেক বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কের অবস্থান। প্রতিনিয়ত এই পার্কগুলোতে উচ্চস্বরে গান বাজানোর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ ও পরীক্ষার হলে শব্দদূষণসহ বিভিন্ন ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ২৪ হলের কাছেই ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কের অবস্থান। পার্কের প্রতিনিয়ত উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয়। এতে বিজয় ২৪ হলের শিক্ষার্থীসহ আশেপাশের মেসের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বিজয় ২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নিলয় সরকার বলেন, 'সকাল দশটার পর থেকে শুরু হয় পার্কগুলোর বিকট শব্দে গান বাজানো। হলের পুরাতন ব্লকের রুমগুলোতে টেকা দায় হয়ে যায়। গণরুমে থাকাকালীন সময়ে তাদের গানের শব্দে ঘুমানো যেতো না। এখনো পড়তে বসলে মন চলে যায় গানের দিকে। পড়ায় মনযোগ দেওয়া যায় না। এ বিষয়ের দ্রুত সমাধান দরকার।'
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই স্বপ্নচূড়া রিসোর্টে উচ্চশব্দে গান বাজানোর ফলে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা হলে মনোযোগ ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, আইন, প্রকৌশল ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীরা এই সমস্যার সম্মুখীন সবচেয়ে বেশি হচ্ছেন। পাশাপাশি, বিনোদনকেন্দ্র বা পার্কগুলোতে প্রতিনিয়ত পর্যটক আসা-যাওয়া করেন। পর্যটকবাহী যানবাহন এবং পর্যটকবাহী গাড়িতে প্রায়ই উচ্চশব্দে গান বাজানো হয়। এতে বিজয় ২৪ হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল ও সুনীতি-শান্তি হলের শিক্ষার্থীদের।
আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আসিফ বলেন, 'আমরা যখন ক্লাস থাকি তখন গানের শব্দগুলো আসে, পরীক্ষার সময়ও বন্ধ থাকেন এতে আমাদের মনযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হয়। ল্যাবে কোডিং করার সময় ও এই শব্দগুলোর জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। দ্রুততার সাথে সমস্যাগুলোর সমাধান দরকার।'
এ বিষয়ে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী লাবিবা ইসলাম বলেন, 'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন জুড়ে বিভিন্ন পিকনিক স্পট। বছর জুড়ে গান বাজনার আওয়াজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় পিকনিক বাসগুলোর জন্য জ্যামসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হয়ে থাকি। ক্লাস, পরীক্ষার মাঝে দেখা যায় স্বপ্নচূড়ার গান বাজনার জন্য পড়াশোনায় সমস্যা হয় আবার শুক্র-শনিবার দুপুরের সময় ম্যাজিক প্যারাডাইসের উচ্চ ভলিউমে গান বাজনার কারণে অনেকসময় মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পড়ালেখার পাশাপাশি শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এ সমস্যাগুলোর কথা খুলে বলা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আমরা দেখিনি।'
২০০৬ সালে শব্দ দূষণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের পার্কগুলোতে শব্দ দূষণ নিয়ে এ আইনের কোন প্রয়োগ নেই।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্বপ্নচূড়া রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'আমাদের রিসোর্টে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয় সেক্ষেত্রে অনেকসময় মিউজিক বাজানো হলে আমরা কিছু বলতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং টুরিস্ট পুলিশ নিয়ে মৌখিক আলোচনা করি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মিউজিক না বাজানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে ক্লাস পরীক্ষা থাকলে সে তথ্য আমাদের দিলে আমরা উচ্চস্বরে গান বাজানো বন্ধ করবো।'
ম্যাজিক প্যারাডাইসের কর্ণধার মাহবুব আলম বলেন, 'আমাদের সাউন্ড বক্সগুলো আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে দেওয়া ছিল, এখন অন্যদিকে ঘুরে দিয়েছি। আর আমরা এক দেড় ঘণ্টার বেশি গান বাজাই না। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হোক।'
এ ব্যাপারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, 'স্বপ্নচূড়া বা আশপাশের রিসোর্ট থেকে শব্দ আসে এটা জানি। ছাত্রদের মধ্য থেকে এখনো কেউ এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিসোর্টগুলোতে গিয়ে কথা বলবো। অভিযোগ না করলেও আমরা এ ব্যাপারে যেহেতু জানতে পেরেছি আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো যাতে ক্লাস পরীক্ষার সময় উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা সৃষ্টি না করা হয়৷'