৫০ বছরেও ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি ড. জোহা দিবস

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সাইফুল্লাহ সাইফ, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-08-31 20:58:02

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৯ সালের এ দিনে পাকিস্তানী বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা (জোহা)। যারা ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত রচিত করেছিল তাদের মধ্যে একজন ড. শামসুজ্জোহা।

এ ঘটনার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ ফেব্রয়ারি ড. জোহা দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এ দিবসকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসলেও ঘটনার প্রায় ৫০ বছরেও তার স্বীকৃতি মেলেনি।

এ বিষয়ে রাবির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় যে জন্য গর্ববোধ করে থাকে তা হচ্ছে, স্বাধীনতার প্রাথমিক সোপান রচনায় প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার অবদান। এটা ঐতিহাসিক সত্য এবং দালিলিকভাবে প্রমাণিত। আমরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিবসটিকে জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছি। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। আমরা এবার প্রক্রিয়াগতভাবে এগোতে চাই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


কি ঘটেছিল সেদিন

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পাকিস্তানি সেনারা মিছিলে গুলি করতে উদ্যত হয়।

এরপর খবর পেয়ে তৎকালীন রাবি প্রক্টর শামসুজ্জোহা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের সামনে দাঁড়ান। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের গুলি করতে নিষেধ করে বলেন, ‘কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে, তা আমার গায়ে লাগবে।’

এক পর্যায়ে তিনি ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে বেলা ১১টার দিকে ক্যাপ্টেন হাদী পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন। গুলিবিদ্ধ ড. জোহাকে পরে রাজশাহী পৌরসভা কার্যালয়ে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ড. শামসজ্জোহার এ আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস।

ড. জোহার সংক্ষিপ্ত জীবনী

১৯৩৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সামসুজ্জোহা দ্বিতীয়। ১৯৪৮ সালে বাকুড়া জেলা স্কুল থেকে ১ম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ক্রিশ্চান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে স্নাতক ও ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে অর্ডিন্যান্স কারখানায় শিক্ষানবিশ সহকারী কারখানা পরিচালক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। পরে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগ দেন। শহীদ হওয়ার সময় ড. সামসুজ্জোহা স্ত্রী নিলুফা জোহা ও এক কন্যা সন্তান রেখে যান। তারা বর্তমানে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বাস করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর