বায়ান্নে দাঁড়িয়ে গৌরবের ভিত্তি

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রুদ্র আজাদ, জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 02:37:35

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল বাঙালি বা বাংলা ভাষীদের জন্য সংগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। মুখের ভাষা রক্ষার সংগ্রামে যখন রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিক তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিলেন বাংলার রাজপথে, আর সেই শহীদদের রক্তের দামে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার মুক্ত করে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ।

স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো নাম না জানা বীরের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হলো অধিকার, বাংলাকে পেলাম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে, আর রচিত হলো বীরত্বের এক ইতিহাস।

আর পূর্ব বাংলার মানুষদের সর্বশেষ সংগ্রাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক পরই ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। লাখো শহীদদের আত্মত্যাগের আবেগের সঙ্গে তাই জড়িয়ে আছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তম্ভ।

আর এসব ইতিহাস এবং আবেগকে ধরে রাখতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের সর্বোচ্চ এবং অন্যতম সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর স্থাপত্যশৈলীতে সমৃদ্ধ শহীদ মিনার।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রস্থল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের সামনে এই শহীদ মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এর পাশ দিয়ে চলে গেছে ত্রিকোণাকার রাস্তা, যা এই সুউচ্চ শহীদ মিনারকে করেছে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত। রাস্তার পাশের উঁচু উঁচু বৃক্ষের ডালপালা আর শহীদ মিনারের চারপাশে আচ্ছাদিত বৃক্ষের সমন্বয়ে মাঝের লাল ইটের অংশ যেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার চিত্র ধারণ করে।

১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সব অর্জনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে তৈরি এ শহীদ মিনারের ভিত্তিমঞ্চের ব্যাস রাখা হয়েছে ৫২ ফুট এবং ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভিত্তিমঞ্চ থেকে উন্মুক্ত আকাশগামী তিনটি স্তম্ভের উচ্চতা রাখা হয়েছে ৭১ ফুট। শহীদ মিনারে তিনটি স্তম্ভের মধ্যে একটি বাংলাভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অপর দুইটি মাটি ও মানুষ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করছে।

১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১ সালকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভিত্তিমঞ্চে ব্যবহার করা হয়েছে আটটি সিঁড়ি। যা ধারাবাহিক বাঙালির সংগ্রামের প্রতীক। এই সুদৃশ্য শহীদ মিনারটির স্থপতি শিল্পী রবিউল হোসাইন। এছাড়া ২০০৪ সালে ৬ নভেম্বর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও ২০০৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে শহীদ মিনার চত্বর জাবি শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এছাড়া শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ন্যায্য আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে শহীদ মিনারটি। তবে কখনো কখনো ভুলতে বসে এর মর্যাদাকে। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অধিকাংশ সময় দেখা যায় জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণরা।

ময়লা আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয় শহীদ মিনার চত্বর। শহীদ মিনারের পাশে পবিত্রতা রক্ষার কথা বলা হলেও মানছে না তা কেউ। তবে অনেকে মনে করছেন শহীদ মিনার স্থলে কিংবা আশপাশে নেই কোনো ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান। ফলে যে যার মতো ময়লা ফেলে রাখে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর