ডাকসুর জিএস প্রার্থী চাকরিজীবী আসিফুর রহমান

বিবিধ, ক্যাম্পাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 00:53:42

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সরকারি বেসরকারি অথবা দেশে বা বিদেশে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো শিক্ষার্থী ডাকসুর ভোটার হতে পারবেন না। আর যারা ভোটার তারাই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।

কিন্তু গঠনতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এ. আর. এম. আসিফুর রহমান (আসিফ ত্বাসীন)। একই সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে নির্বাচনে প্রভাব খাটানোরও অভিযোগ তুলছেন অন্য প্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা।  

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্র।

আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র কেনা প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ছিল মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেনের কাছে ডাকসুর জিএস পদে মনোনয়পত্র জমা দেন চাকরিজীবী আসিফুর রহমান। এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তথ্য জানান আসিফুর রহমান।

ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘আমি, এ. আর. এম আসিফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়ছি।’

এ সময়ও তার এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পরিচিতিতে দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে পরিচয় দিতে দেখা যায়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার ফেসবুক ওয়ালে নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে পরিচয় দিতে দেখা যায়।

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আসিফুর রহমানের সাংবাদিক পরিচয় জানতে দৈনিক প্রথম আলোতে যোগাযোগ করা হলে অফিস থেকে নিশ্চিত করা হয় যে, আসিফুর রহমান পত্রিকাটির একজন নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ১ (গ) নং ধারায় বলা হয়, ‘সরকারি/বেসরকারি অথবা দেশে বা বিদেশে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো শিক্ষার্থী ডাকসুর ভোটার হতে পারবে না।’

জিএস পদে প্রার্থী হতে মনোনয়ন জমা দেওয়া আসিফুর রহমান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিজের সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে আসিফ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব খাটাতে চাচ্ছেন। যা একজন সাংবাদিক হিসেবে তার দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়।

এ বিষয়ে ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক একাধিক সভাপতি বার্তা২৪.কমকে জানান, ঢাবি সাংবাদিক সমিতির কোনো পদে থেকে তো নয়ই, কোনো সদস্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো সংগঠনের পদে থাকতে পারবেন না।

এ বিষয়ে জানতে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেউ চাকরিজীবী হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। তবে সেক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুসারেই সংক্ষুব্ধ কেউ অভিযোগ জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘প্রাপ্ত মনোনয়নপত্র প্রাথমিক বাছাই শেষে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার)। এর পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে প্রকাশিত তালিকার বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকলে ডাকসুর সভাপতির (উপাচার্য) নিকট লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।’

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে জিএস পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আনিসুর রহমান অনিক। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের বিরোধী যেকোনো কিছুর বিষয়ে আমাদের অভিযোগ আছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, গঠনতন্ত্রের নিয়ম ভেঙে যাতে কেউ প্রার্থী হতে না পারে।’

মনোনয়পত্র জমা দিয়ে আসিফুর রহমানের শোডাউন, এ সময় তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদেরও দেখা যায়/ ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সহ-সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী সাদ্দাম হোসাইন এ বিষয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন। তবে আসিফের বিষয়ে আমরা তো জানি তিনি চাকরিজীবী নন।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আসিফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত নই। আমি যেখানে কাজ করতাম সেখান থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। আমি নির্বাচন করছি।’

তার কর্মস্থল দৈনিক প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী তার কর্মরত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না, আমি অব্যাহতি নিয়েছি।’

এ সময় ফেসবুকে পরিচিতিতেও কর্মজীবী হিসেবে উল্লেখের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফেসবুক দিয়ে কি আর বাস্তবতা নির্ধারণ করা যায়?’

এ সম্পর্কিত আরও খবর