ডাকসু নির্বাচন: ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে চাপা বিভক্তি

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 18:29:23

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের বাকী মাত্র ৬ দিন। নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া ছাত্র সংগঠন ও জোটগুলো তাদের প্যানেল থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। স্বতন্ত্রভাবেও অনেক প্রার্থী ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ইতোমধ্যে ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিশন বৈধপ্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছেন।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সমর্থন, পেশী শক্তি, জনপ্রিয়তা ও কর্মীবাহিনী দিয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে তাদের রয়েছে বিপুল কর্মীবাহিনী ও একক আধিপত্য। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার আগেই ক্যাম্পাস ও হলে প্রচারণাও শুরু করেছে ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। আর এই প্রচারণাতেই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে এক ধরনের চাপা বিভক্তি লক্ষ্য করা গেছে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মতে, নির্বাচনের আগেই এই চাপা বিভক্তি মেটানো না গেলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের পুরো প্যানেল কাঙ্খিত বিজয় নাও পেতে পারে। তাই ২৮ বছর পর হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেলে কাঙ্খিত বিজয় পেতে এখনই সময় বিভক্তি মিটিয়ে ‘অলআউট’ প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিজয়ের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে নেওয়া।

এবারের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল’ থেকে ভিপি পদে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, জিএস পদে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও এজিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হুসাইন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ছাত্রলীগ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন মনোনয়ন বঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সরেজমিনে ঘুরে দেখে গেছে, ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ক্যাম্পাসে, হলে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাস এলাকা। হলের রুমে রুমে প্যানেল পরিচিতির লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে।

তবে এরমধ্যে শুরুতেই বিতর্ক ওঠে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের রঙিন পোস্টার নিয়ে। যে রঙিন পোস্টার ডাকসুর নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী। অভিযোগ আছে, শোভনকে বিতর্কিত করতেই ছাত্রলীগের একটা অংশই সভাপতির অগোচরে রঙিন পোস্টার ছাপিয়ে ক্যাম্পাসে লাগিয়ে দিয়েছে।

এদিকে ক্যাম্পাস ও হলে ছাত্রলীগরে প্রচারণা শুরু হলে সেখানেও সবজায়গায় পূর্ণ প্যানেলকে একসঙ্গে দেখা যায় না। যা থেকে বিভক্তির ধারণা পাচ্ছে ভোটাররা। যেমন গত রোববার (৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রংপুর বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেও নিয়ে মত বিনিময় করেন ভিপিপ্রার্থী শোভন। সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন জিএস প্রার্থী রব্বানী ও তার অনুসারীরা ঠিক তেমনি পরেরদিন সোমবার (৪ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মাদারীপুর জেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্যাম্পেইন করেন জিএস প্রার্থী রাব্বানী, সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন শোভন ও তার অনুসারীরা।

অন্যদিকে ক্যাম্পাসে বিশাল কর্মীবাহিনী থাকা সত্বেও ডাকসুতে ছাত্রলীগের প্যানেলে মনোনয়ন বঞ্চিত সনজিত প্রচার-প্রচারণায় অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। পূর্ণ প্যানেলের প্রচারণায় তাকে যেমনটা দেখা যায় না, ঠিক তেমনি ক্যাম্পাসে তার বিশাল অনুসারী ও কর্মীদের মধ্যেও রয়েছে নিস্ক্রিয়তা। অভিযোগ আছে, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যকার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে সনজিতের গোপন সমর্থন চলে যেতে পারে কিশোরগঞ্জ জেলায় বাড়ি এক সতন্ত্র প্রার্থীর দিকে।

এছাড়া ছাত্রলীগের প্রচারণায় নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে গতকমিটির সিনিয়র নেতা-কর্মীদের। ক্যাম্পাসে পরিচিতি, জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে যেমন ভোটের প্রচারণায় ডাকা হয় না তেমনটা অভিমান করেও সিনিয়র ওইসব নেতা-কর্মী আগবাড়িয়ে অলআউট প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে না।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলের দায়িত্বে থাকা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের কাছে নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আসলে আমাদেরকে নিয়ে কেন্দ্রের কোনো পরিকল্পনা আছে কী না সেটাও আদৌ স্পষ্ট নয়। সবাই তার মাইম্যানদের নিয়েই রাজনীতিতে ব্যস্ত।’

এদিকে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী প্যানেল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ালেও তাদেরকেও দেখা যায়নি নির্বচানী প্রচারণায়। ছাত্রলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে তাদের সদস্য করা হলেও ভূমিকা এখনও স্পষ্ট নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতার মধ্যে চাপা বিভক্তি এখন স্পষ্ট। ডাকসু কার্যকর হলে ক্যাম্পাসে ডাকসুর নির্বাচিত নেতাদের মূল্যায়ন বেড়ে যাবে সেই আশঙ্কায় চার নেতাই ক্যাম্পাসে নিজেদের গ্রুপ শক্তিশালী করা ও ক্ষমতার দাপোট বজায় রাখতে একে অন্যের ‘বিরুদ্ধে’ কাজ করছে। নিজেদের কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রাখছে। একজনের প্রচারণায় আরেকজন কিংবা তার কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন না। ভোটের যেখানে সপ্তাহখানেক বাকী নেই, সেখানে এই চাপা বিভক্তি অশনি সংকেত।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যকার চাপা বিভক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচনে জিএস পদপ্রার্থী গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাজনে পূর্ণ প্যানেল বিজয় অর্জনে ছাত্রলীগ পরিবার ঐক্যবদ্ধ। স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসু উপহার দিতে ছাত্রলীগ বদ্ধপরিকর।

উল্লেখ্য, আগামী ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর