বিয়ে প্রতারণা প্রতিরোধে প্রযুক্তির উদ্ভাবন

বিবিধ, ক্যাম্পাস

মো. আশিকুর রহমান, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 20:35:57

বাল্যবিয়ে ও বহুবিয়ে প্রতিরোধে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী মো. আলমাস হোসাইন শাজা এবং মো. ইউসুফ জামিল রনি আবিষ্কার করেছেন এক অভিনব প্রযুক্তি। তাদের আবিষ্কৃত ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে বিয়ে প্রতারণা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দেশে বাল্যবিয়ে ও বহুবিয়ে একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশ সরকারের বাল্যবিয়ে নিরোধে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও প্রতিনিয়তই প্রকাশ্যে বা গোপনে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে ও বহুবিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিয়ের প্রবণতা একটু বেশি দেখা যায়। যার ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি সমাজ ও সভ্যতা নানাবিধ অপরাধে নিমজ্জিত হচ্ছে।

বিভিন্ন অঞ্চলে বিয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কথা প্রায়শই শোনা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছেলে/মেয়ে পূর্বেই বিবাহিত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে আবার তাদের সন্তানও থাকে। এভাবে প্রতারণার ফাঁদে অনেক ছেলে/মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও কোনো সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া বাবা-মা, কাজী, উকিল বাবা সাজিয়ে বিয়ের কাজ সেরে ফেলেন। তাদের উদ্দেশ্য সুন্দরী মেয়েকে কনে বানিয়ে বেশি টাকা দেনমোহরের মাধ্যমে কোনো ধনবান ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেয়া। এরপর কয়েকদিনের ব্যবধানে ডিভোর্সের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আদায় করা।

এদিকে বয়স বাড়িয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ের সংস্কৃতি আমাদের সমাজে সর্বাত্মক। এ সকল সমস্যা সমাধানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী যুগান্তকারী উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন। যা এখন চারদিকে আলোড়ন সৃষ্টি করছে।

এ বিষয়ে আলমাস হোসাইন বার্তা২৪.কমকে জানান, তারা ‘বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ফর প্রিভেন্টিং ইলিগ্যাল ম্যারেজ’ ডিভাইস তৈরি করেছেন। যার মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানের ভিত্তিতে বিয়ে নিবন্ধন, বর-কনের পূর্বোক্ত বৈবাহিক অবস্থা ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সহজেই জানা যাবে। এই ডিভাইসটির মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত বর-কনের জন্ম নিবন্ধন/ ভোটার আইডি নাম্বার বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানের মাধ্যমে পূর্বোক্ত বৈবাহিক অবস্থা, প্রকৃত বয়স ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি জানা যাবে।

তিনি আরও জানান, নির্ধারিত দেনমোহর ও এর পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন ফি-এর ব্যাপারে ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া বিয়ে নিবন্ধন ফি সফটওয়্যার নির্ধারিত পিন নাম্বারের বদৌলতে সরাসরি রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর/মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করলে, রাষ্ট্র বিয়ে নিবন্ধন বাবদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং প্রজেক্টের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাইন উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের দুই শিক্ষার্থীর এই উদ্যোগটি সত্যিই প্রশংসনীয়। এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে ও বহুবিয়ে নামক অভিশাপ থেকে আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্র মুক্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস। রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রত্যেকেই উক্ত ডিভাইসটির মাধ্যমে সুফল ভোগ করতে পারবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর