নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করতে চান ডাকসুর নারী প্রার্থীরা

বিবিধ, ক্যাম্পাস

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-02 19:56:05

দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেমন তরুণ মেধাবী নেতৃত্ব তৈরির দ্বার উন্মোচিত হব, তেমনি নারী সমাজের মেধাবী নেতৃত্ব তৈরিরও সুযোগ তৈরি হবে।

 

এবারের নির্বাচনে মেধাবী নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার ডাকসুতে ছাত্রদের পাশাপাশি ৩০ জন ছাত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে দু‘জন ভিপি, তিনজন জিএস, আরেকজন এজিএস পদের প্রার্থী। বাকিরা সম্পাদক ও সদস্য পদে লড়ছেন। এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, রোকেয়া হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, কবি সুফিয়া কামাল হল ও শামসুন নাহার হল সংসদ পদে লড়ছেন ছাত্রীরা।

ডাকসুর এই নারী প্রার্থীরা ভবিষ্যতে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে চান। নেতৃত্ব দিয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন তারা। কেউ কেউ বলেছেন, স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের পিছিয়ে পড়া নারীদের সচেতন করতে চান তারা। কারও প্রত্যাশা, অবহেলিত নারীদের অধিকার আদায়ে প্রস্তুত করবেন। দরিদ্র মেধাবী ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতেও চেয়েছেন অনেকে।

ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সদস্য পদের প্রার্থী নিপু ইসলাম তন্বী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রীদের এগিয়ে নিতে কাজ করব। মেয়েদের হলগুলোতে আবাসন সমস্যা আছে; ছাত্রীদের জন্য হলের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে কাজ করব।’

নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তন্বী। বলেন, ‘সমাজে নারীদের যেসব সমস্যা হয়; সেগুলো একজন মেয়ে হিসাবে আমি অনুধাবন করতে পারি; বুঝতে পারি। যদি সংসদে যাওয়ার সুযোগ পাই, তাহলে সামনে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করব।’

ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক প্রার্থী কানেতা ইয়া লাম-লাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নারীদের নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনে কাজ করবে। ছাত্রীদের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাজ করব। এছাড়া, ছাত্রীদের মেধা বিকাশে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করব।

ছাত্র মৈত্রী প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী সনম সিদ্দিকী (শিতি) জানান, দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা বেড়েছে; তারা রাজনীতিতে আসছে। আমি চাই, নারী সব কিছু সুরক্ষিতভাবে করুক, সেটা রাজনীতি হোক; আর যে কোনো ক্ষেত্রেই থাকুক না কেন।’

ডাকসু নির্বাচনে নারী প্রার্থী নারীর ক্ষমতায়নে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে, এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, এটা ভালো লক্ষণ। তবে এটা নির্ভর করবে তাদের কতটুকু কাজ করতে দেওয়া হবে। পদের ক্ষমতা কতখানি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে তার উপর। সব কিছু মিলিয়ে দেখা যায়, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দুশ্চিন্তা থাকবে। তবে সময় এসেছে, যারা ডাকসু নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

ডাকসুর নারী প্রার্থীরা

এবারের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে নারী প্রতিনিধি হিসাবে লড়ছে জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অরণি সেমন্তি খান (স্বতন্ত্র জোট) এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ফাহমিদা মজিদ। আর জিএস পদে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উম্মে হাবিবা বেনজির ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত প্যানেল থেকে; বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শফিকা রহমান শৈলী জাসদ ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে এবং ছাত্র মৈত্রী থেকে শবনম শিতি । এজিএস পদে নির্বাচন করছেন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের ফারাহ মাহযাবিন।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের জাকিয়া সুলতানা ও ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের শ্রবণা শফিক দীপ্তি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মালিহা সুলতানা। কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের কানেতা ইয়া লাম-লাম (ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল), উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের নাসিমা আক্তার, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের মাহমুদা ইসলাম সুমনা, উর্দু বিভাগের লিপি আক্তার (ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেল), তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শেখ এমেলী জামাল এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সুমাইয়া ইয়াসমিন স্মৃতি।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে আইন বিভাগের শাহরিমা তানজিম অর্নি, সাহিত্য সম্পাদক পদে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সানজিদা বারী, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ইংলিশ ফর স্পিকার্স অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস বিভাগের তামান্না তাসনিম আর সমাজসেবা সম্পাদক পদে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের নওরিন আক্তার নিশাত।

সদস্য পদে লড়ছেন ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের নিপু ইসলাম তন্বী, আফনান আক্তার, নৃবিজ্ঞান বিভাগের আরিফা রহমান, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের তিলোত্তমা সিকদার, অর্থনীতি বিভাগের নহলী নাফিসা খান, মার্কেটিং বিভাগের ফাতেমা আক্তার, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ফরিদা পারভীন, সঙ্গীত বিভাগের মোছা. রহিমা খাতুন, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের রাইসা নাসের, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের রাকা আজিজ এবং দর্শন বিভাগের সাবরিনা ইতি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর