ডাকসু নির্বাচন: ‘ধীরগতি’ কৌশলে সুবিধা পেয়েছে ছাত্রলীগ

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,ঢাকা | 2023-08-29 11:50:32

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনা। ইতোমধ্যে কিছু কিছু হল সংসদ নির্বাচনের ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা শুরু করেছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

সোমবার (১১ মার্চ) নির্বাচনের ভোট গ্রহণের নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৮টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যেই সব হলে ভোটগ্রহণ শেষ হলেও কুয়েত মৈত্রী হল ও রোকেয়া হলে কিছুটা দীর্ঘ সময় ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের হার ধীর গতি হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ভোট দিতে এসেও ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন।

জানা গেছে, ভোটগ্রহণ যেন ধীরে ধীরে হয় তেমন একটা কৌশল ছিল ছাত্রলীগের। যেহেতু হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র এবং সেখানে তাদের একচেটিয়ে আধিপত্য তাই এই কৌশলের মধ্যদিয়ে দিয়ে তারা ‘সময়ক্ষেপণ’ করতে চেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল হল ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।

এ ছাড়া ডাকসু ও হল সংসদ মিলে একজন ভোটারের ৩৮টি ভোট দেওয়া, আইডি কার্ড ঠিক না থাকা, ব্যালট পেপার নাম্বার খুঁজে না পাওয়া সহ বেশ কয়েকটি কারণে ভোট গ্রহণের হার কম হয়েছে।

সরেজমিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা যায়, সকাল আটটার অনেক আগে থেকে ভোটকেন্দ্রের সামনে বিশাল লম্বা লাইন দেখা যায়। প্রতিটি হলেই ভোটের লাইনগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। কোনো কোনো হলের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি নিজেরাই লাইন থেকে ৫/১০ মিনিট দেরি করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিছেন, ঠিক তেমনি কোনো কোনো হলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে এলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে লাইনের শেষে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তাই এক পর্যায়ে অনেক অনাবাসিক শিক্ষার্থী ভোট দিতে না পেরে ফিরে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি হলের ছাত্রলীগ নেতারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের ওপর নির্দেশনা ছিল হলে ভোট গ্রহণের হার নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়া নির্বাচনে বহিরাগতরা যেন কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেদিকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ ছিল।

ফিরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একজন এম আইএস বিভাগের মিসকাতুল ইসলাম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মহসীন হলে ছিল আমার ভোট। সকালে সাড়ে আটটার দিকে এসে দেখি কেন্দ্র থেকে লাইন শুরু হয়ে গিয়ে ঠেকেছে সেলুনের সামনে। ওখান থেকে তিনঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কেন্দ্রে আসতে পারিনি। তাই শেষমেশ ভোট না দিয়েই চলে আসি।’

ছাত্রলীগের এই কৌশল নিয়ে জানার জন্য সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সনজিৎ চন্দ্র দাসকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

অথচ একই অভিযোগের ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জিএস পদপ্রার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘কোন হলে কাকে বাধা দেওয়া হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। আমরা শতভাগ ভোট কাস্ট হোক সেটা চেয়েছি। সবাই যেন ভোট দিতে পারে সেজন্য আমরা আন্তরিক ছিলাম। যেখানেই অভিযোগ শুনেছি, আমরা ছুটে গিয়েছি এবং সমাধানের চেষ্টা করেছি।’

একদিকে যেমন ছিল ভোট না দিতে পারার হতাশা ঠিক তেমনি অনেকে ডাকসু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জীবনের প্রথম ভোট দিতে পেরেও খুশিও হয়েছেন।

জানতে চাইলে কুয়েত-মৈত্রী হলের অনাবাসিক ছাত্রী ইশরাত জাহান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম ভোট দিতে পেরে আমি খুব খুশি। আমাদের হলে শুরুতে সমস্যা হয়েছিল কিন্তু পরে ভোটগ্রহণ শুরু হলে লাইনধরে গিয়ে আমরা ভোট দিয়ে আসি। ভোট দিতে কোন অসুবিধা হয়নি।’

এদিকে, ভোট গ্রহণের হার নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’ মহসীন হলের প্রভোস্ট ও রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মোট ভোটের ৫২ শতাংশ ভোট হয়েছে আমার হলে। এই হার তো খারাপ নয়।’

অন্যদিকে, মহসীন হলের নির্বাচনী দায়িত্বপালনকারী ওই হলের এক আবাসিক শিক্ষককে নির্বাচন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে বললে তিনি বলেন, ‘কীসের নির্বাচন কলঙ্কের সাক্ষী হয়ে থাকলাম।’

তবে নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছে। সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা বজায় রেখে ভোট দিয়েছেন। এটা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দৃষ্টান্ত।’

উল্লেখ্য, ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবশ্য নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রহসনের অভিযোগ তুলে দুপুর একটার দিকে ছাত্রলীগ বাদে বাকী প্রায় সব প্যানেল ও প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর