বেরোবির ‘স্বাধীনতা স্বারক’ নির্মাণে কচ্ছপ গতি

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 23:35:06

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ‘স্বাধীনতা স্বারক’ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ছয় বছরেও শেষ হয়নি স্বারক নির্মাণের কাজ। নির্মাণ কাজ কচ্ছপ গতিতে চলায় ভাস্কর্য চত্বর ঘিরে বেড়েছে অসামাজিক কার্যকলাপ।

২০১২ সালে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য সাবেক উপাচার্য মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়াকে জনতা ব্যাংক অর্থ প্রদান করে। পরের বছরের ২৮ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রথম ‘স্বাধীনতা স্বারক’ ভাস্কর্যটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নং ফটকের দক্ষিণ পার্শ্বে স্বারক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ঐ বছরের ডিসেম্বরে। পরবর্তীতে উপাচার্যের আন্তরিকতা ও পদক্ষেপের অভাবে থমকে যায় নির্মাণ কাজ। বিশিষ্ট স্থপতি মুনাওয়ার হাবীব তুহিনের নকশায় ‘স্বাধীনতা স্বারক’ ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ছয় বছরেও শেষ হয়নি।

২০১৬ সালে প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ্ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আবারও শুরু হয় স্মারক নির্মাণের কাজ। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি স্থাপনাটির কাজ। কচ্ছপ গতির কাজ আর তদারকিতার অভাবে জাতীয় দিবসগুলোতে প্রত্যাশানুযায়ী স্মারকটি ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করছেন, অসম্পন্ন ‘স্বাধীনতা স্মারক’ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শহীদের আত্মত্যাগকে ছোট করে দেখা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা স্বারকের নকশানুযায়ী ১১ হাজার ৬৯৬ বর্গফুট আয়তনের বেদির উপর তিনটি স্তম্ভ দ্বারা তৈরি হবে এই স্মারকটি। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ স্তম্ভের উচ্চতা হবে ৫৫ ফুট। দ্বিতীয়টির ৩৫ ও তৃতীয়টির উচ্চতা ২৫ ফুট। পাথর দ্বারা নির্মিত এই স্তম্ভের গায়ে পোড়ামাটি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংবলিত কারুকার্য থাকবে। স্তম্ভের ঠিক পেছনে ঢালু অংশের দেয়ালে বিভিন্ন ম্যুরাল থাকবে।

কিন্তু ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বাধীনতা স্মারকের দুই দিকেই মাটি ভরাটের কাজ বাকি। মেঝেতে মার্বেল পাথরের কাজ থাকলেও তা সম্পন্ন হয়নি। ভাস্কর্যের স্তম্ভের গায়ে পোড়ামাটি দিয়ে কারুকার্যের কাজও সম্পন্ন হয়নি। তিন স্তম্ভের পেছনের দেয়ালের গায়ে ছোট ছোট টাইলস দিয়ে ম্যুরাল তৈরি করা হয়নি। ভাস্কর্যটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেও বছরের পর ধরে কারুকার্যের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় যেন কঙ্কাল হয়ে পড়ে আছে ‘স্বাধীনতা স্মারক’।

অভিযোগ উঠেছে, স্বাধীনতা স্মারকটি দীর্ঘদিন অবহেলায় আর অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকায় দিন দিন বাড়ছে অসামাজিক কাজ। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে স্বাধীনতা স্মারকের পাদদেশে বাড়তে থাকে বহিরাগতদের আনাগোনা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই আড্ডা। এছাড়াও দিনের বেলাতে স্থানীয় টোকাই ও প্রেমিক যুগলদের উৎপাত দেখা যায় সেখানে। এ রকম অব্যবস্থাপনায় স্বাধীনতা স্মারকটি তার মর্যাদা হারাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা।

নির্মাণ কাজের ধীরগতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) শরীফ হোসাইন পাটোয়ারি বলেন, ‘স্বাধীনতা স্মারক নির্মাণের জন্য যে বাজেট ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে বাজেট না আসা পর্যন্ত বাকি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর