জাকসু নির্বাচন বন্ধ করতেই পরিকল্পিত সংঘর্ষ!

বিবিধ, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 18:39:50

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসকে রণক্ষেত্র করে তুলতে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র সংসদের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৩ জুলাই) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও মওলানা ভাসানী হলের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। আর এ সংঘর্ষ চলে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে। এতে শিক্ষক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ মোট ৬৫ জন আহত হন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনের হীন চক্রান্ত বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সংঘর্ষকে বড় করে তোলা হয়েছে।

জানা যায়, গত ২৮ জুন অনুষ্ঠিত সিনেট সভায় সিনেটরদের তোপ থেকে বাঁচতে এর আগের দিন (২৭ জুন) দু’টি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে জরুরি সংলাপের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সেখানে জাকসু নিয়ে বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া, তড়িঘড়ি করে গুটি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে সংলাপের আয়োজন করায় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। পরে ২৮ জুন ‍সিনেট অধিবেশন শুরুর পূর্বে সভাস্থলকে কেন্দ্র করে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় জাকসু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির জন্য সিনেটরদের চাপ দেন তারা। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। চাপের মুখে উপাচার্য ঘোষণা করেন যে জুলায়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করবেন এবং নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করবেন।

জাবিতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ছবি: বার্তা২৪.কম

 

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, সিনেট সভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উপাচার্য এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে জাকসুর কাযক্রম বাধাগ্রস্থ করতেই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংঘর্ষকে রণক্ষেত্রে রূপ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে, এ সংঘর্ষ দীর্ঘক্ষণ ধরে চলার কারণ হিসেবে প্রক্টর, প্রক্টরিয়াল বডি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে তুলে ধরছেন মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।

অন্যদিকে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে জাকসুর পরিবেশ বিনির্মাণকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস হিসেবে দেখছে শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জাবি শাখার আহ্বায়ক শাকিল-উল জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাকসু নির্বাচনের একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই জাকসুর পরিবেশ বানচাল করতে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়মিত ভাবে শিক্ষার্থী স্বার্থ বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। আর সেজন্য তারা কখনো চায় না যে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হোক। গত ২৭ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। নতুন করে যখন শিক্ষার্থীদের চাপে উপাচার্য জাকসু কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু সেটা বানচাল করতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটা সংর্ঘষকে দীর্ঘ তিন ঘণ্টায় রণক্ষেত্রে রূপ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা চাইলে আরো আগেই এ সংর্ঘষ বন্ধ করতে পারতো।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘গতকাল সংর্ঘষ শুরু হওয়ার পর আমরা প্রক্টরকে পুলিশ আনার জন্য বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথা রাখেননি। সংর্ঘষ শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিট পর তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ এনেছেন। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সংর্ঘষ বন্ধ করতে ব্যর্থ। এছাড়া এর পেছনে ঘোষিত জাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন করার চেষ্টা বানচাল করার ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর