মাদক আতঙ্কে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

বিবিধ, ক্যাম্পাস

আরাফ আহমদ, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট, বাতাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 23:17:58

মাদকের ছড়াছড়িতে আতঙ্কে আছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। র্দীঘদিন ধরে মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও নেই কোনো উদ্যোগ।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে মাদকের ছড়াছড়ি দেখা দেয়। বিশেষ করে ছাত্রদের শাহপরান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, সৈয়দ মুজতবা আলী হলের বিভিন্ন কক্ষে নিয়মিত বসে মাদকের আসর। হলের ছাদে আড্ডার নামে মাদক সেবন করার অভিযোগ উঠলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাদ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এছাড়া মেয়েদের প্রথম ছাত্রী হল ও বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলে এবং এদের অধীনে ভাড়া বাসাগুলোতেও ছাত্রীদের মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হল ও মুজতবা আলী হলের মধ্যবর্তী টিলায়, গাজী কালুর মাজার, ছাত্রী হলের পাশ্ববর্তী টিলা, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটরিয়ার পেছনে, শিক্ষা ভবন ‘ই’ এর পাশে, মেডিক্যাল সেন্টার থেকে শারীরিক শিক্ষা দফতরের রাস্তায়, মুক্তমঞ্চের পেছনে, বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের পাশ্ববর্তী জায়গা এবং কেন্দ্রীয় গ্যারেজের পেছনেও বিভিন্ন সময় চলে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের আসর। ক্যাম্পাস ও হলের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী বেশ কয়েক মেসে চলে সমানতালে মাদক সেবন।

এতে অতিষ্ঠিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় আবাসিক হলে এ সকল কর্মকাণ্ড হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্রে আরও জানা যায়, বেশকিছুদিন মাদকের উৎপাত বন্ধ থাকলেও আবারও পাল্লা দিয়ে চলছে মাদক সেবন। বহিরাগত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ইয়াবা, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। আগে হাতেহাতে মাদক বিক্রি হলেও সম্প্রতি সময়ে পরিবর্তন হয়েছে মাদক বিক্রির ধরন। বেশ কিছুদিন ধরে মোবাইলে মাদকের অর্ডার নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

ক্যাম্পাস ও প্রক্টরিয়াল বডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় একাডেমিক ভবন ‘সি’ এর টিলার পাশ্ববর্তী টং থেকে মাদকদ্রব্যসহ ছয় বহিরাগত যুবককে আটক করেছিল প্রক্টরিয়াল বডি। একই বছরের ৯ নভেম্বর ৩২ পুটলি গাঁজাসহ পাঁচ বহিরাগতকে আটক করা হয় এবং গাঁজা সেবন ও ক্রয় করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের দশ শিক্ষার্থীকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপর নড়েচড়ে বসে ক্যাম্পাসের ভেতরের সিন্ডিকেটটি। বেশ কিছুদিন ক্যাম্পাস ও হলের বাইরে অবস্থান করলেও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় আবারও ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলে এদের কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ যোগদানের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি চলছে বলে জানা গেছে। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও র‌্যাব-৯ এর সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে মাদক বিরোধী আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আয়োজকরা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় আলোচনা সভাটি পণ্ড হয়।

সম্প্রতি সিলেট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ নিয়মিত মাদক প্রবেশ করছে। এদের একটি বড় গ্রাহক হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সিলেটে মাদকের সহজলভ্যতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। প্রতিদিনই সিলেটের প্রশাসনের অভিযানে আটক হচ্ছে মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীরা।

আতঙ্কের কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোবারক হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যদি মাদকের করাল গ্রাসে পড়ে তাহলে আগামীদিনের বাংলাদেশ যোগ্য নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়বে। প্রশাসনের উচিৎ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে দ্রুত মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’

শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সব সময় জিরো টলারেন্সে আছে। ছাত্রলীগের কেউ মাদকের সাথে জড়িত নয়। জড়িত থাকলে এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সেমিনার করেছিলাম। সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবার সেমিনার আয়োজন করা হবে। হলে ও ক্যাম্পাসে যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকমুক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার সব করব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর