তর্ক ছাড়া কি লক্ষ্যে পৌঁছা যাবে?

বিবিধ, ক্যাম্পাস

কুহুকী কিন্নরী, দ্বিতীয় বর্ষ, হলিক্রস কলেজ | 2023-08-27 16:25:01

মাত্র বাসায় ফিরল মৃত্তিকা। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেবে ও। ছোটবেলা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটা ওর ভীষণ আপন। স্কুল, কলেজ দুটো সেখানেই ছিল যে ছিল। অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেই পারে না সে। বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই গণ্ডিতেই থাকতে চায়। এই যে, ওর কত বন্ধু পড়াশোনা করতে বিদেশ চলে যাচ্ছে, কিন্তু একটিবারও সে তা চায়নি। দেশেই পড়াশোনা করতে চেয়েছে। ওর ছোটবেলা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল। স্কুল থেকে বেরিয়ে যখন আপু ভাইয়াদের দেখত, মুগ্ধ হয়ে যেত। ওদের আড্ডা, আড্ডায় গিটার বাজানো, গানের আসর, কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত মুখে আলোচনা কিংবা নিছক একসাথে বসে থাকাও মৃত্তিকাকে টানত, ওর মনে হতো যেন আপু ভাইয়াদের প্রত্যোকটা আচরণই আলাদা, ইচ্ছে হতো ওদের দিকেই তাকিয়ে থাকে, মৃত্তিকা তাড়াতাড়ি বড় হতে চাইত। ওদের মতো হওয়ার জন্যই।

যত দিন দিন বড় হয়েছে মৃত্তিকা, দেখেছে ক্যাম্পাসের চিত্র পাল্টে যেতে। কোনো বিশেষ পার্বণে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে দেখেছে উচ্ছৃংখলতা। যেখানে সাবধানতা ছাড়াই ঘুরে বেড়াত সেখানে যাওয়াই বারণ হয়ে যাওয়া। হাসিমাখা স্নিগ্ধ মুখগুলোকে বদলে যেতে দেখেছে মৃত্তিকা। স্বপ্নের বিদ্যাপীঠকে শ্রেষ্ঠত্বের তালিকা থেকে বের হয়ে যেতে দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল। যেখানে সে চিন্তাই করতে পারত না যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নফাঁস, নকল বা অন্যায় কোনো কিছু ঘটতে পারে এখন সে তা-ও মেনে নিয়েছে। কিছুদিন পরপর পরীক্ষার নিয়মনীতির পরিবর্তন তো আছেই। ও শুধু প্রার্থনা করত যখন পরীক্ষা দেবে, তখন যেন নতুন কোনো প্রক্রিয়া শুরু না হয়। এগুলো তো বেশ ক বছরের কথা। এগুলোকে মেনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে টিকে ছিল মৃত্তিকার। তবে বেশ কিছুদিন যাবত তার সত্যিই খুব চিন্তা হচ্ছে। চিন্তা না বলে ভয় বললেও খুব একটা ভুল হবে না। উপাচার্যদের নিয়ে যেসব বিতর্ক, অভিযোগ পত্রিকায় উঠে আসছে সেগুলো ভয়ঙ্কর।

আরো ভয়ঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি। নিজস্ব আদর্শ, মতামত কিছুই যেন নেই। ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ছাড়া কিছুই ভাবা যায় না। একজন মানুষের অন্য মানুষের মতের সঙ্গে ভিন্নতা থাকতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। অথচ ভিন্নমত প্রকাশের জন্য পৃথিবী থেকেই বিদায় নিতে হলো আবরার ফাহাদকে। ভিন্ন ভিন্ন মত থেকেই তো বোঝা যাবে কোনটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। কোন মতের পক্ষে বেশি মানুষ। সবাই যদি একই ধারায় চিন্তা করে তাহলে তো সত্য কোনটি, আমরা বুঝে নিতে পারব না। স্কুল-কলেজে এখনো আমরা তর্ক-বিতর্ক করছি। মৃত্তিকা ভাবছে-তর্ক না করে সংকীর্ণ মানসিকতা ও চিন্তাধারা নিয়ে আমরা বিশ্বগ্রামের মানুষ হব কী করে? বহুমাত্রিক মতাদর্শের পৃথিবীর নাগরিক হওয়ার অধিকার তো তাহলে আমাদের নেই।

কুহুকী কিন্নরী
দ্বিতীয় বর্ষ, হলিক্রস কলেজ

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর