জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

, ক্যাম্পাস

হারুনুর রশিদ, জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 09:08:30

ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংহতির ধারক বাহক পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। আজ (২০ অক্টোবর) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বুড়িগঙ্গার নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক সময়ের পাঠশালাটি ১৮৫৮ সালে ব্রাহ্ম স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৮৭২ সালে জগন্নাথ স্কুল, ১৮৮৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ, ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজ এবং ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৯ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও  বিভিন্ন ভবনসমূহ আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হবে এবং ৯টা ১৫ মিনিটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এরপর সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সুসজ্জিত শোভাযাত্রাটি উপাচার্য মহোদয়ের নেতৃত্বে শহীদ মিনার চত্বর হতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে, বাংলাবাজার ওভারব্রিজ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে শেষ হবে। এ বছর ক্যাম্পাসের ৯টি জনপ্রিয় ব্যান্ডদল শিল্পীদের নিয়ে ঝমকালো কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে নাটকসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর সাড়ে ৭ একর জায়গা নিয়ে জাতীয় সংসদে আইন পসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা সংকুলান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, নতুন একাডেমিক ভবন এবং গবেষণা কাজের সুবিধার্থে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ২০০ একর জমিতে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটে প্রায় ৬৫৭ জন শিক্ষক, ১৪ হাজার ২০৮ জন শিক্ষার্থী, ৬৬৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৯ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও  বিভিন্ন ভবনসমূহ আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে
 

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সাতটি শিক্ষাবর্ষে ২১৪ জন শিক্ষার্থী এমফিল ও ৮৭ জন পিএইচডি করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বাংলাবাজারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রীহল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের’ নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনে ১৮ হাজার ২৮৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।

প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান জোবায়ের বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। মাত্র ১৪ বছরে আমাদের অনেক প্রাপ্তি আছে। বিসিএস, ব্যাংক জবসহ বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য অবদান রাখছে। কিছুদিন আগে পরিত্যক্ত পলিথিন ব্যাগ থেকে ডিজেল ও পেট্রোল তেল তৈরির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহম্মাদ মাহমুদুর রহমান।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধা এবং গবেষণাগারেও নজর বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে সমগ্র ক্যাম্পাস ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। ই-বুক সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন সব বই বা গবেষণা পত্রিকা পড়ার জন্য শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই সব অনলাইনে প্রবেশ করতে পারেন।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি পরিবর্তন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান আহরণ এবং পাঠদান দুটি কাজই হয়ে থাকে। আমরা এটি করতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মেধাবীরা ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষকদের অনেকে বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। ইউজিসি এবং সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষকরা বিভিন্ন গবেষণায় ব্যস্ত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চারুকলা, সঙ্গীত, নাট্যকলার মতো বিভাগ চালুর মাধ্যমে সুকুমারবৃত্তির সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটেছে।‘

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সমস্যা ছিল একাডেমিক ও আবাসন সমস্যা। সরকার আমাদের কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমি দিয়েছে। এখানে মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ও আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে এ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর