প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে ঢাবির উর্দু-ফারসি-সংস্কৃত-পালি বিভাগ

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ইমরান হোসাইন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 10:38:50

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু, ফারসি, সংস্কৃত ও পালি—এ চারটি বিভাগ রাখার যৌক্তিতা নেই বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ। আরবি বিভাগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক নাসরিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ে এসব বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা ছিল। বর্তমান সময়ে এগুলো প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। এসব বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও বিভাগ হিসেবে থাকার প্রয়োজন একেবারেই নেই।’

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের লেখা উচিত মন্তব্য করে অধ্যাপক নাসরিন বলেন, ‘তোমরা এটা নিয়ে একটু লেখালেখি করো। অবশ্যই এগুলো বিভাগ হিসেবে থাকা উচিৎ না, এগুলো ল্যাংগুয়েজে চলে যাক—এটা হওয়া উচিৎ। যখন পাকিস্তান ছিল তখন উর্দু শিখত, এখন এটা শিখে কী করবে? উর্দু শিখে তারা সেটার অনুবাদও করতে পারছে না। ফারসি শিক্ষার্থীরা নাকি পরীক্ষায় বাংলায় লেখে। পালি; তারাও কিচ্ছু জানে না—সংস্কৃতও কিচ্ছু জানে না।’

অধ্যাপক নাসরিন বলেন, ‘তবে একেবারে থাকা উচিৎ না—সে কথা আমি বলতে পারব না। কারণ, এখানে যেসব শিক্ষক-কর্মচারী আছেন তাদের কথাও আমাকে চিন্তা করতে হবে। তাই এসব বিষয়কে বিভিন্ন ল্যাংগুয়েজের আন্ডারে, যেমন—ওরিয়েন্টাল ল্যাংগুয়েজ… ইত্যাদিতে রেখে দেওয়া উচিৎ।’

শিক্ষার্থীরা অজ্ঞাতবশত এসব বিষয়ে পড়তে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী খারাপ রেজাল্ট করার পর হয়তো এখানে শুধু ভর্তির চান্স পেয়েছে। তাকে ওখানটায় দেওয়া হলো—সংস্কৃতি। সে জানেও না সংস্কৃতি নামে একটা ল্যাংগুয়েজ আছে। তারপরেও যখন সে পড়তে আসছে, সে কী পড়ে বের হচ্ছে? আদৌ এসব বিষয়ের অনার্স লেভেলে, মাস্টার্স লেভেলের মানে পড়ানো হচ্ছে কি না। আমরা কি সেই লেভেলে পড়াচ্ছি ওদের? আমাদের শিক্ষকও নেই, আমরা ওদের পড়াচ্ছিও না। তাহলে কেন শুধু শুধু এগুলোকে ওই লেভেলে একটা ডিপার্টমেন্ট করে রাখা হবে। একেবারে এমনটি থাকা উচিৎ না।’

ভাষা শিক্ষার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক নাসরিন বলেন, ল্যাংগুয়েজ কোনো খেলনা না। এটাকে শিখতে পারলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স ভালো উদ্দেশ্যে শুরু করা হলেও এখন সেটা কিছু ব্যক্তি অর্থের জন্য পরিচালনা করছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে কয়টি বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, উর্দু, সংস্কৃত এবং পালি ছিল তার অন্যতম। বর্তমানে এ চারটি বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক, খণ্ডকালীন শিক্ষকসহ প্রায় ৫৬ জন কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া এ চারটি বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১৭৮৪ জন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন অনিচ্ছা থাকা সত্বেও তারা এসব বিভাগে ভর্তি হন। উদ্দেশ্য কোনোভাবে গ্রাজুয়েশন শেষ করা।

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পেয়েছি। সেখানে আরও ভালো বিষয় নিয়ে পড়তে পারতাম। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব বলেই এখানে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু দিন শেষে কী পাচ্ছি বা পাবো সেটা আমার জানা নেই। ভর্তি হওয়ার সময় এসব মাথায়ও ছিল না। শুধু ঢাবি এটাই ছিল মূল ভাবনা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডিন ও অধ্যাপকরাও এই চার বিভাগ রাখার পক্ষে না। তারাও মনে করেন, এসব নিয়ে এখন কথা বলার সময় এসেছে। বিভাগগুলো বাতিল কিভাবে করা যায় এবং এসবের জায়গায় নতুন বিভাগ খোলা যায় কিনা সেটাও কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর