শিক্ষা ও গবেষণায় শাবিপ্রবি শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে: রাষ্ট্রপতি

, ক্যাম্পাস

শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-26 22:04:27

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, যেকোনো দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে তরুণ সমাজ-ই মূল চালিকা শক্তি। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। আজ তোমরা যারা গ্র্যাজুয়েট তোমরা এক একটি আলোর প্রদীপ। সকলকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসতে হবে। জ্ঞানকে কর্ম ও মানব মুক্তির সহায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। শুধু যে নিজেকে সরকারি চাকুরে বা অন্য যেকোনো চাকুরে হিসেবে ব্যপিত রাখবে এটা জাতি প্রত্যাশা করে না। নিজেরাই চাকরির নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করবে। তোমাদের তৈরি করা ক্ষেত্রের মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব নিরসন করবে।

সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিচর্চা ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে প্রথম। শুধু প্রতিষ্ঠা ক্রমের দিক থেকেই নয়, শিক্ষা ও গবেষণাতেও বিশ্ববিদ্যালয়টি তার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। গবেষণা ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটি তার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের সুনাম সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, দেশ ও বিদেশের কর্মক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা শ্রেষ্টত্ব অর্জনের মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে আনছে। আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত, জঙ্গি ও মৌলবাদমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়ার নেপথ্যে ভূমিকা রেখে ভবিষ্যতেও তার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখবে।

সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক মনজুরুল ইসলামের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আবদুর হামিদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আরও বলেন, সিলেটে আসার পর রাস্তার মধ্যে পলিথিন পেপার, কলার বাকল, কাগজ এখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখেছি। পরিষ্কারের মানসিকতা আমাদের দেশ থেকে মনে হয় হারিয়ে গেছে। এই সকল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জনগণকে শিক্ষার্থীদের মোটিভেট করতে পারে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষকরা যদি সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তাহলে আর এই সমস্যা থাকবে না। আমার মনে হয় কেউ এই বিষয়ে মাথাঘামায় না। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। সবাইকে এই দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার এবং এগিয়ে আসা উচিৎ।

তিনি আরও বলেন, আগে সিলেটের কমলা আমাদের এলাকায় যেতো আর এখন চীন থেকে কমলা আনা হয়। চীন থেকে কমলা দেশে আনতে ২০/২৫ দিন লাগে। দুই-আড়াই মাস লাগে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছতে। আড়াই মাস পরেও কমলা পচে না। কারণ এসবে ফরমালিন দেওয়া থাকে। আর ফরমালিন হল বিষ। শুধু কমলা না প্রত্যেকটি ফলেই ফরমালিন দেওয়া হয়। এমনকি শাকসবজি, মাছ, মাংস সবকিছুতেই ফরমালিন।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৭৫০ জন নিবন্ধন করেন

এমনকি গুড়া মসলাতেও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। এই গুলো খাওয়ার ফলে মানুষের ব্যাপক হারে ক্যান্সার হচ্ছে। এসব খাওয়ার ফলে দেশে ক্যান্সার রোগী বাড়ছে। ক্যান্সারের ফলে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা লাভের জন্য এইসব করছে, এতে বলা যায় তারা গণহত্যা করছে। দেশের আইন অনুযায়ী কেউ মার্ডার করলে তার যাবজ্জীবন অথবা মৃত্যুদণ্ড হয়। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উচিত মানুষকে মোটিভেট করা। সামাজিকভাবে এটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা উচিত এবং সরকারকেও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তা যদি না করা হয়, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা পঙ্গু হয়ে যাবো। সবাইকে বিনীতভাবে, আকুলভাবে অনুরোধ করছি দেশকে বাচাঁনোর জন্য। রাতে রাতি বড়লোক হওয়ার জন্য মানুষকে এভাবে মেরে, লুটপাঠ করা মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে গ্র্যাজুয়েটদেরকে এগিয়ে আসার বিনীত অনুরোধ করেন তিনি।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের জট শেষ হয়ে যাবে এবং আগামী থেকে নিয়মিত সমাবর্তন হবে বলে জানান আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৭৫০ জন নিবন্ধন করেছেন। এদের মধ্যে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ২০জনকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর