বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২১ সালে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। আমরা চাই এই সময়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নবজাগরণ সৃষ্টি হোক। আর এর প্রধান চালিকা শক্তি হবে গবেষণা ও উদ্ভাবন। যা দিয়ে দেশে-বিদেশে মানুষের কল্যাণ সাধিত হবে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (এআইইউবি) মিলনায়তনে আয়োজিত 'ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব কম্পিউটিং অ্যাডভান্সমেন্টস (আইসিসিএ) ২০২০' শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এআইইউবির ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের উদ্যোগে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন। তিনি চেয়েছিলেন দেশের মানুষ বিশ্বে মাথা উঁচু করে বাঁচুক। তিনি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
'কিন্তু তিনি তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তার কন্যা শেখ হাসিনা সোনার বাংলা গড়তে দিনরাত কাজ করে চলেছেন। এলক্ষ্যে তিনি আমাদের ফ্রেমওয়ার্ক করে দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- ভিশন ২০২১, ২০৩০ ও ২০৪১ এবং ১০০ বছর ব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান। এসব ভিশন বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় আমাদের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে।'
তিনি বলেন, আমরা এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি। এ উপলক্ষে ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ থেকেই শুরু হচ্ছে জন্ম শতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা।
'এ অবস্থায় আমরা চাই মুজিব বর্ষে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও নবজাগরণ সৃষ্টি হোক। আর তা করতে হবে গবেষণা ও উদ্ভাবন দিয়ে। এতে স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিতের পাশাপাশি এর সমাধান যেমন বেরিয়ে আসবে, তেমনই আন্তর্জাতিকভাবেও ইন্ডাস্ট্রি কোলাবরেশন বাড়াতে হবে। এভাবেই আমাদের জনসম্পদকে কাজে লাগাতে পারলেই গড়ে ওঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।'
তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাবলিক-প্রাইভেট হিসেবে দেখছি না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও কোনো রঙ নেই, তারা সবাই জাতির কল্যাণে অবদান রাখে। আমাদের দেশ খুবই ছোট কিন্তু আমাদের রয়েছে ৮০ মিলিয়ন যুবশক্তি, যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৫-৩৫ বছরের কম। তারাই আমাদের চালিকাশক্তি।
'তাদের যোগ্য করে তুলতে পারলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্স-সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। লোকাল প্রবেলম সলভ করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি কোলাবরেশন বাড়াতে হবে,' বলেন ড. সাজ্জাদ হোসেন।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের এই গবেষক বলেন, আমি যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে পড়াশোনা শুরু করি তখন এ বিষয়টি অনেকেই বুঝতেন না। এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিষয়টি আন্দাজ করতে পারলেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে কী সম্ভব তা অনেকেই ভাবতে পারছেন না। তবে এটাই হচ্ছে বাস্তব যে, ভবিষ্যতে ইন্টারনেট অব থিংসের মতো বিষয়গুলোই সব নিয়ন্ত্রণ করবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় ২০০৭ সালে একটি রাজনৈতিক দল যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় তখন তা কেউই বুঝতে পারেনি। কিন্তু এটা এখন বাস্তব। আমাদেরও সেভাবেই চিন্তা করতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিসিএ ২০২০ এর চেয়ারম্যান ও এআইইউবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. তফাজ্জল হোসাইন।
এ সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, এআইইউবির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান নাদিয়া আনোয়ার, ট্রাস্টির সদস্য ড. হাসানুল এ হাসান ও ইসতিয়াক আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি গবেষক ও শিক্ষকেরা কম্পিউটিং অ্যাডভান্সমেন্টসের ওপর বিভিন্ন সেশনে আলোচনা করবেন।