বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) শুরু হয়ে শুক্রবার (৬ মার্চ) পর্যন্ত চলবে দু'দিনব্যাপী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী। বাংলাদেশের জনপ্রিয় মাল্টিমিডিয়া অনলাইন নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কম এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মিডিয়া পার্টনার। কয়েক হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী এ উপলক্ষে মিলিত হবেন নানা আনুষ্ঠানিক আয়োজনে। সুবর্ণ জয়ন্তীর আলোকোজ্জ্বল সমাবেশে ভিড় করবে পেছনে ফেলে আসা বিগত ৫০ বছরের অসংখ্য স্মৃতি ও অর্জন। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও আলোড়িত চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে।
গত শতাব্দীর আশি দশকের মধ্য ভাগে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনের আর নব্বই দশকের সূচনায় শিক্ষকতা জীবনের শুরুর সময় বাংলাদেশে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ফলে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ-খবর আমাদের জানা ছিল। নিজের বিভাগের (সরকার ও রাজনীতি) পাশাপাশি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র/রাজনীতি বিজ্ঞানের বিভাগীয় শিক্ষকমণ্ডলী ও কার্যক্রম সম্পর্কেও আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম।
আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, যা বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বয়সে নবীন ও আকারে ছোট ছিল। প্রাচীনত্বে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। কিন্তু একাডেমিক লিডারশিপ, যোগ্য শিক্ষকমণ্ডলী, আধুনিক সিলেবাস ও রিসোর্সের দিক থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ ছিল সবার চেয়ে অগ্রগামী। বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র/রাজনীতি বিজ্ঞানের সিলেবাস প্রণয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, বিদ্যায়তনিক কার্যক্রম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব ছিল না।
এসব সম্ভব হয়েছিল বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষকদের শিক্ষক, প্রফেসর ড. আর.আই. চৌধুরীর মেধা, মনন, যোগ্যতা, নেতৃত্ব ও দূরদৃষ্টির কারণে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ লিটারেচার ও সুদক্ষ শিক্ষকদের তিনি সমন্বিত করেছিলেন বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে, যার জ্ঞানগর্ভ দীপ্তি, প্রভা ও বহিঃপ্রকাশ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশ ও উপমহাদেশ ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এ কারণে পেশাগত জীবনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে এগিয়ে থেকেছেন। বিসিএস, শিক্ষা এবং আর্থ, সামাজিক, রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়েছে।
বিভাগের একাডেমিক ও মানবসম্পদের শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের অর্জনও অপরিসীম। বহুমত ও বহুচিন্তার সমন্বয় সাধন করে সামাজিক বন্ধন ও সাংস্কৃতিক বহুমাত্রিকতায় ছাত্র-শিক্ষকরা একটি পারিবারিক বলয়ের মতো সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতায় প্রণোদিত৷ নানা মত ও পথ বিভাগের কাঠামোয় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উজ্জ্বলতায় বিরাজমান।
একটি একাডেমিক বিভাগের গতিশীল পথচলায় গৌরবময় অর্ধশতক পেরিয়ে সুবর্ণ জয়ন্তীর আলোকমালায় উদ্ভাসিত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যে ঘটনা পরম্পরায় যুক্ত আছেন হাজার-হাজার ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং তাদের অংশগ্রহণ ও অবদান। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলেই সম্ভব হয়েছে বিভাগের যাবতীয় অর্জন।
সুবর্ণ জয়ন্তীর আনুষ্ঠানিকতায় ফেলে আসা অতীতের স্মৃতি ও ঘটনাক্রম সামনে আসবে এবং ভবিষ্যতের পথে আরও সুসংহতভাবে গতিময়তায় এগিয়ে চলার প্রত্যয় জাগাবে। আমাদের অতিক্রান্ত জীবনের বাঁকে বাঁকে মিশে থাকা রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অবদান ছড়িয়ে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
প্রকৃতির অনিবার্য নিয়মে ব্যক্তি মানুষের আসা-যাওয়া চলতেই থাকবে। কিন্তু একটি প্রাণময় প্রতিষ্ঠান অনাদিকাল বেঁচে থাকবে মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ তেমনই এক অনন্য ও কালোত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের দূর প্রান্তের উত্তর চট্টগ্রামের অনিন্দ্য ভূগোল থেকে আলোকিত করছে সমগ্র বিশ্বকে। ক্যাম্পাসের অপরূপ প্রকৃতি ও নিসর্গের মতো একাডেমিক বিভাগ ও বহুমাত্রিক কৃতিত্ব অনাগতকালেও ছড়াতে থাকবে।
চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের আর্থ, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় বহু প্রতিষ্ঠান নানাভাবে ভূমিকা পালন করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও তেমনি এক জাতীয় প্রতিষ্ঠান, যার অনেকগুলো আলোকিত বিভাগের মতো রাজনীতি বিজ্ঞান অন্যতম। এ বিভাগের মাধ্যমে হাজার হাজার মানব সম্পদ দেশের শিক্ষা, প্রশাসন, ব্যবসা, রাজনীতিসহ শিল্প, সংস্কৃতির জগতকেও উজ্জ্বল করেছে। ৫০ বছর পেরিয়ে সুবর্ণ জয়ন্তীর স্বর্ণোজ্জ্বল আলোক দীপ্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ নিজের গৌরব মুকুটে সংযোজন করবে আরও অনেক সাফল্যের চিহ্ন, এই প্রত্যাশা সকলের।
প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম